কোনো একটি দৈনিক পত্রিকার খবরে প্রকাশ, বিএনপি নাকি আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য গড়তে চাচ্ছে একটি মহাজোট। কিন্তু এই জোট হবে কেবল প্রগতিশীল বলে কথিতদের নিয়ে। এতে থাকবে না বিএনপির সাথে ইতঃপূর্বে যে ২০ দলীয় জোট হয়েছিল তার ইসলামপন্থী দলগুলো।
ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে আবার কথা উঠেছে জামায়াতে ইসলামীকে বিশেষভাবে পরিত্যাগ করার। যদিও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল ও জনগণের সমর্থনে বিএনপি আসতে পেরেছিল ক্ষমতায়; কোনো কথিত প্রগতিশীল দলের সাহায্য সহযোগিতায় নয়। জোট নিয়ে তাই দেখা দিচ্ছে জট। বোঝা যাচ্ছে না, ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনতাকে বাদ দিয়ে বিএনপি কী করে ভোটে জিততে পারবে। কারণ, বাংলাদেশে ইসলাম একটি বিরাট রাজনৈতিক শক্তি।
এ ছাড়া, এ দেশে প্রগতিশীলদের ওপর সাধারণ মানুষের নেই এখনো তেমন আস্থা। যা ছিল তা উবে যেতে বসেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর; আর চীনের বাজার অর্থনীতি গ্রহণ করতে দেখে। প্রশ্ন উঠেছে, জোট গড়া হচ্ছে কেন? দেশের স্বার্থে না দলের স্বার্থে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিলেতে কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি জোট গড়েছিল। গঠন করেছিল জোট সরকার। লক্ষ্য ছিল যুদ্ধে জার্মানি, ইতালি ও জাপানকে পরাজিত করা। এর মূলে ছিল দেশের স্বার্থ। কোনো বিশেষ দলের স্বার্থ নয়। কিন্তু আমাদের দেশে জোট গড়া হচ্ছে মূলত দলের স্বার্থে; দেশের স্বার্থ ভেবে নয়। এটাও দেশের রাজনীতিতে সৃষ্টি করছে জট।
অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে জোট সরকার হয়। যেমন : সুইডেনে। কিন্তু সুইডেনের দলগুলো নির্বাচনের আগে দিয়ে জোট বাঁধে না। দলগুলো নির্বাচনে দাঁড়ায় পৃথক পৃথকভাবে। নির্বাচন হওয়ার পর সমমনা দলগুলো জোট বাঁধে। গঠিত হয় সরকার ও তার বিরোধী পক্ষ। আমাদের দেশেও একইভাবে যদি দলগুলো পৃথক পৃথকভাবে দাঁড়ায় এবং পরে জোট বাঁধে, তবে দেশে গঠিত হতে পারে শক্তিশালী সরকার। আর সেই সরকার অনেক ব্যাপকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে জনমতের।
গণতন্ত্রের বাস্তব ভিত্তি হলো জনমত। জনমত, রাজনৈতিক দল ও অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনকে নির্ভর করে একটি দেশে গণতন্ত্র স্থাপিত হয়। মানুষ একটি দেশে একটি রাজনৈতিক দলকে বিচার করার সুযোগ পায়। একটি দলের মূল্যায়ন হতে পারে নীতি, নেতা ও তার কর্মীবাহিনী দিয়ে। কিন্তু আমাদের দেশে যেন তেমন কিছু হতে যাচ্ছে না। জোট হচ্ছে কেবলই ক্ষমতার রাজনীতিকে ঘিরে; দেশের স্বার্থকে নির্ভর করে নয়। একপক্ষ চাচ্ছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ চাচ্ছে অন্য দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে। অর্থাৎ, রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে ক্ষমতাকে পাওয়া ও ধরে রাখবার জন্য। রাজনীতি হয়ে উঠছে কার্যত ক্ষমতার রাজনীতি। দেশাত্মবোধের রাজনীতি নয়। কিন্তু শক্তিশালী দেশ গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন হয় দেশ গড়ার রাজনীতি করা।
কেবলই দল গড়ার রাজনীতি করা নয়। আমাদের গড়তে হবে শক্তিশালী দেশ। আর এই শক্তি বলতে বুঝতে হবে সামরিক শক্তিকে। পত্রিকার খবরে দেখলাম, ভারত বর্তমান বছরে (২০১৮ খ্রি:) ৪৬ হাজার কোটি রুপির অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির কাজে লাগে এ ধরনের উপকরণ বিশ্বের বাজার থেকে ক্রয় করেছে। প্রশ্ন হলো, ভারতকে কে আক্রমণ করতে যাচ্ছে। কেন তার এই বিরাট সমর আয়োজন। বাংলাদেশকে যদি তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে হয়, তবে তাকেও ভাবতে হবে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ার কথা।
কেবল গণতন্ত্রই তার রাষ্ট্রের একমাত্র সমস্যা নয়। গণতন্ত্রের চর্চার নামে আমরা যদি আমাদের প্রতিরক্ষার প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করি, তবে সেটা হবে মারাত্মক ভুল। আজ মিয়ানমারের মতো রাষ্ট্র আমাদের সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিতে পারছে বাংলাদেশের মধ্যে। আমারা কিছুই করতে পারছি না। কামনা করছি আন্তর্জাতিক সহায়তা। কিন্তু ভারত, চীন, রাশিয়া ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে মিয়ানমারের পক্ষ। একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো এ ক্ষেত্রে আছে কিছুটা বাংলাদেশের পক্ষে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রগতিশীলরা এখনো বলতে ব্যস্ত, দেশের স্বার্থকে বিবেচনায় না নিয়ে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক। এতে আমরা কিভাবে লাভবান হতে পারছি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। শুনতে পাচ্ছি, ভারত আসাম থেকে তের-চৌদ্দ লাখ বাংলাভাষী মুসলমানকে ঠেলে দিতে পারে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে।
এ রকম কিছু ঘটলে সৃষ্টি হবে একটি বিরাট মানবিক বিপর্যয়। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে যেন কিছু ভাবতে চাচ্ছে না। কেবলই চিন্তা করতে চাচ্ছেন ভোটের রাজনীতি নিয়ে। মুক্ত ভোটের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই স্বীকার্য। কিন্তু জাতির জীবনে সেইটাই এখন একমাত্র সমস্যা নয়। সমস্যা ছিল এবং এখনো হয়ে আছে আমাদের রাষ্ট্রিক অস্তিত্ব রক্ষা। বর্তমান বাংলাদেশ একটা সুপ্রাচীন আর সুপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র নয়। আমাদের সামান্য ভুলেই এর স্বাধীনতা ও সার্বভৌত্ব হতে পারে বিপন্ন। আওয়ামী লীগ বলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা। কিন্তু আসলে এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে ঠিক কী বুঝতে হবে?
২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। এতে তিনি বলেছেন, তিনি হলেন সমাজতন্ত্রী। কিন্তু কমিউনিস্ট নন। এ কথা বলে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন আমরা তা জানি না। তবে পাঠ্যপুস্তকে সমাজতন্ত্রী আর কমিউনিস্টদের মধ্যে বিভেদ রেখা টানা হয় এইভাবে- সমাজতন্ত্রীরা চান গণতান্ত্রিক উপায়ে আইন করে ধাপে ধাপে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। অন্য দিকে, কমিউনিস্টরা চান বল প্রয়োগ করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে এক দলের কর্তৃত্বে পঞ্চবার্ষিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা।
বল প্রয়োগ করে ক্ষমতা দখলের কথা সব সমাজতন্ত্রী বলেন না। এ বিষয়ে প্রথম বলেন কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক অ্যাঙ্গেলস তাদের রচিত কমিউনিস্ট ম্যানুফেস্টোতে। যার ওপর নির্ভর করে ১৯১৭ সালে নভেম্বর মাসে ঘটে বিখ্যাত রুশ বিপ্লব। চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসে ১৯৪৮ সালে। কিন্তু বর্তমানে রুশ বিপ্লব পরিণত হয়েছে বিরাট ব্যর্থতায়। আর চীনে কমিউনিস্ট পাটি ক্ষমতায় থাকলেও পরিত্যাগ করেছে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ধ্যানধারণ। কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এখনো বলছে, আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র।
আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে বোঝাচ্ছে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে। যেটা বর্তমান বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণীয় হতে পারে না। বাংলাদেশের জন্য গ্রহণীয় হলো, ওই যাকে বলা হয় মিশ্র অর্থনীতি, সামাজতান্ত্রিক অর্থনীতি নয়। বিএনপি দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন মিশ্র অর্থনীতির অনুসারী। তার সময় শুরু হয় বিদেশে শ্রমশক্তি রফতানি; শুরু হয় তৈরী পোশাক রফতানি। আরম্ভ হয় গলদা চিংড়ি রফতানি। এসবই হতে পারে ব্যক্তি উদ্যোগে কিন্তু রাষ্ট্রিক সহায়তায়। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পেতে পারে বিশেষ গতিবেগ। জিয়া গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন, একদলের রাজত্বে নয়। তিনি বিশ্বাস করতেন বংশের রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি তাই চেয়েছিলেন এমন আইন প্রণয়ন করতে, যাতে কোনো দল মৃত বা জীবিত ব্যক্তিকে নিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভক্তিবিশ্বাস গড়ে তুলতে না পারে। জিয়াউর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদে আস্থাশীল ছিলেন না। কেননা, সব বাংলাভাষী মানুষ একটি রাষ্ট্রের পতাকা তলে আসতে পারেননি। যাদের মাতৃভাষা বাংলা, তাদের শতকরা ৬০ ভাগ বাস করেন বাংলাদেশে। আর বাদবাকি ৪০ ভাগ হলেন ভারতের বাসিন্দা। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এক ব্যঞ্জনা বহন করে না। বাংলাদেশী শব্দটা অবশ্য নতুন নয়। খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে মহাকবি আলাওল তার কাব্যে বাংলাদেশী শব্দটা ব্যবহার করেছেন।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী নামটা নিজে আবিষ্কার করেননি। তিনি নামটা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়েছিলেন সাংবাদিক (পরে মন্ত্রী) আব্দুল হামিদের দ্বারা প্রভাভিত হয়ে। জিয়া বলেন, আমাদের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। জিয়া রেখে গিয়েছিলেন একটা বিশেষ ধরনের মনন কাঠামো। মনে হয় বিএনপি যেন জোট গঠনের উন্মাদনায় এই চিন্তাকাঠামো থেকে বেশ কিছুটা ভিন্ন হয়েই উঠছে, যা দলটিকে আদর্শগত দিক থেকে তুলবে যথেষ্ট বিভ্রান্ত করে। আদর্শিক বিশৃঙ্খলা একটা দলকে দুর্বল করে ফেলে। সে দেশকে দিতে পারে না গোছানো নেতৃত্ব।
বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন যে, আওয়ামী লীগ হলো একটা ফ্যাসিস্ট পার্টি। সে চায় একদলের রাজত্ব। তার চিন্তা-চেতনা গণতন্ত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কিন্তু ইতিহাস বলে, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ল ই ব্রেজনেভের পরামর্শে, কোনো ফ্যাসিস্ট নেতার পরামর্শে নয়। মির্জা সাহেব রাজনীতি করছেন অথচ খোঁজ রাখেন না এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের। একটা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ভৌগোলিক অবস্থানের কথা মনে রেখেই করতে হয় রাজনীতি। কিন্তু তিনি সেটা করছেন বলে অনুমিত হতে পারছি না। হলে তিনি আওয়ামী লীগকে একটা ফ্যাসিস্ট দল না বলে, বলতেন কমিউনিস্ট দল। অন্য দিকে, সারা দুনিয়ায় বামচিন্তায় যখন নেমেছে ধস, তখনো আওয়ামী লীগের মধ্যে বেশ কিছু সাবেক মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট অনুপ্রবিষ্ট হয়ে আছেন, যারা প্রকারন্তরে চাচ্ছেন বাকশালেরই প্রতিষ্ঠা।
শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে কোনো দিনই কমিউনিস্ট বলতে চাননি। নিজেকে বলতে চেয়েছেন স্যোসালিস্ট বা সমাজতান্ত্রিক। বাকশাল গঠনের মূলে ছিলেন তার মেজ বোনের ছেলে শেখ ফজলুল হক মণি (১৯৩৯-১৯৭৫) এবং শেখ মুজিবের ভগ্নিপতি সেরনিয়াবাত (১৯২১-১৯৭৫)। শেখ ফজলুল হক মণি কম্যুনিস্ট ছিলেন না, কিন্তু কী করে তিনি সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পেরেছিলেন, তা জানা যায় না। কিন্তু সেরনিয়াবাত ছিলেন বহু দিন আগে থেকেই মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট। মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা অবশ্য সবাই এখন আর যে এক রাস্তায় হাঁটছেন এমন নয়; তাদের একটা অংশ হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ বিরোধী। তারা জোট গড়তে চাচ্ছেন বিএনপির সাথে। কিন্তু বিএনপি তাদের সাথে জোট বেঁধে লাভবান না হয়ে বরং মনে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তই হবে বেশি।
আমার মনে পড়ছে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে। এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় ১০ বছর। এতে মারা গিয়েছিল ১৮ হাজারের কাছাকাছি সোভিয়েত সৈন্য। যতগুলো কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়েছে, তার মধ্যে একটি হলো এই আফগান যুদ্ধ। এই আফগান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা বলেছিলেন, বাংলাদেশে আফগান স্টাইলে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাতে বিন্দুমাত্র সাড়া দেননি।
এ রকম একটি দলের সাথে হাত মিলিয়ে বিএনপি যদি ভাবে, সে শক্তিশালী হবে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র মজবুত হবে, তবে নীতিগতভাবেই সে করবে ভুল। আমি বিএনপির কথা বলছি, কারণ আমি চাই বাংলাদেশে দ্বিদলীয় গণতন্ত্র গড়ে উঠুক। এক পক্ষে থাকুক আওয়ামী লীগ এবং আর এক পক্ষে থাকুক বিএনপি। গণতন্ত্রে খুব বেশি সংখ্যায় দল হলে অনেক দেশেই হতে দেখা গেছে অস্থায়ী মন্ত্রিসভা। দেশের সরকার হয়েছে দুর্বল। গণতন্ত্র দ্বিদলীয় হলেই (যেমন : বিলেতে) গণতন্ত্র হতে পারে মজবুত, সরকার হতে পারে স্থিতিশীল। সময় হাতে বেশি নেই। নির্বাচন আশু। বিএনপি যদি তার জনসমর্থন কাজে লাগাতে পারে, তবে অন্য দলের সাথে জোট না বেঁধেই সে জিততে পারবে অনেক আসনে। বিএনপির মূল সঙ্কট হলো কর্মী সঙ্কট। বিএনপিকে উদ্যোগ নিতে হবে কর্মী সংগ্রহে। জোট গঠনে ব্যস্ত হয়ে কোনো লাভ আছে বলে মনে হয় না। ড. কামাল হোসেন, খ্যাতনামা চিকিৎসক বদরুদ্দোজা চৌধুরী নামী লোক। রাজনীতিক হিসেবে তাদের খ্যাতি যথেষ্ট। কিন্তু তারা দু’জনেই হলেন সৈন্যবিহীন সেনাপতির মতো। এদের সাথে জোট বেঁধে কোনো লাভ হবে না। অন্তত ভোটের ক্ষেত্রে। বিএনপিকে অগ্রসর হতে হবে আত্মশক্তিতে নির্ভর করে। জোটের রাজনীতি করতে গিয়ে অযথা জট সৃষ্টি করা হবে ভুল রাজনীতি।
২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশ।