এবনে গোলাম সামাদ : শ্রদ্ধায়…- ফরহাদ মজহার

Source: protipokkho.com

এক

যতোদূর মনে পড়ে এবনে গোলাম সামাদের লেখা আমি প্রথম পড়েছি একটি সাহিত্য পত্রিকায়। সম্ভবত সিকান্দার আবু জাফরের ‘সমকাল’ হবে। খুব তরুণ বয়সের পাঠ। ষাটের দশক, নোয়াখালি ছেড়ে সবে ঢাকায় পড়তে এসেছি। এসে দেখি যাদের যাদের একটু প্রতিভাবান বলে মনে হচ্ছিল, তারা প্রায় সবাই কবিতা লেখে, অথবা লিখতে বাসনা করে। আর, তাদের দ্বিতীয় ভাব, রবীন্দ্র সঙ্গীত গায় বা গাইতে চায়। এই সময়টায় বুদ্ধিজীবিতার অর্থ দাঁড়িয়েছিল কবিতা লিখতে পারা, খানিক সাহিত্য করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো ইত্যাদি। বুদ্ধিজীবী হবার তৃতীয় আরেকটি গুণ ছিল: ‘বাঙালি’ যে ‘আবহমান ধরে গড়ে ওঠা একটি জাতি সেটা সবাইকে সবক দিয়ে বেড়ানো।

সেই সময় সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ছিল প্রবল। কিন্তু সাহিত্য সমাজের খুবই দরকারী বৃত্তি কিন্তু কেন জানি সেটা বুদ্ধিজীবিতা নয় বুঝতাম। জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার মেজাজ ও প্রতিভা আলাদা। রাজনীতি তখন আস্তে আস্তে গরম হয়ে উঠছে। ছাপাযন্ত্রের সুবাদে বাংলা সাহিত্যের প্রচার বেড়েছে, নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণি ‘আধুনিক সাহিত্য’ করতে চাইছে। ওলক্ষ্যে আরেকটি ঘটনা ঘটছিল। মুদ্রণ যন্ত্র বা গুটেনবাগের টেকনলজি স্থানীয় ভাষার জায়গায় একটা প্রমিত বাংলার পয়দা ও প্রচারে অনেক দূর এগিয়ে যায়। নোয়াখালি, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, রংপুর, বরিশাল। অর্থাৎ যে কোন জেলার কথাই নেওয়া হোক, স্থানীয় ভাষার জায়গায় লিখিত ও মুদ্রিত ‘বাংলাভাষা’ নিজের আধিপত্য দাবি করছে। মাতৃভাষাকে হঠিয়ে ছাপাখানার ভাষা ‘মাতৃভাষা’ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে রেডিও এসে গিয়েছে। বেতারের সঙ্গে কলকাতার রবীন্দ্র সঙ্গীত আর অনুরোধের আসর। ‘বাঙলি’ ব্যাপারটা এই সব কারখানার মধ্যে রান্না হতে শুরু করে। ‘আবহমান’ কথাটা আমার তখন খুব মজা লাগত। মনে হোত প্রকৃতি আর ইতিহাসের আর কোন কাজ ছিল না, শুধু নদীমাতৃক বাংলাদেশে কবিতা পড়ুয়া আর রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া ‘বাঙালি’ পয়দা করা ছাড়া। টেকনলজি কিভাবে আমাদের ভাষাবোধ, চেতনা ও আত্মপরিচয় নির্মাণের জগতকে বদলে দেয় এ ব্যাপারে আমাদের হুশ ষাটের দশকে যেমন ছিল না, এখনও নাই। এ নিয়ে কোন গবেষণাই হয় নি। এই অন্ধকার অবস্থায় আমরা এখন প্রবেশ করেছি ডিজিটাল জগতে।

সে যাই হোক। ইতিহাসবিদ ও সমাজতাত্তি¡করা ষাটের দশকে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা বাণিজ্যের বিস্তৃতির তথ্য যোগ করতে পারেন। তৎকালীন ঔপনিবেশিক আমল থেকেই পূর্বপাকিস্তান পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়ন বা গেøাবালাইজেশানের অন্তর্গত ছিল। কারণ আমরা পাট উৎপাদন করতাম। সোনালি আঁশ। সেটা বিদেশে রপ্তানি হোত। স্বাধীনতার পর ওটাই ছিল বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে পাকিস্তানের টিকে থাকার ভিত্তি। কৃষি একসময় শহর কলকাতার অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়েছে, সাতচল্লিশের পর তা সরল অন্যত্র, করাচি ও ইসলামাবাদে। ইসলামাবাদ উন্নয়নের পথ হিসাবে রাষ্ট্রের উদ্যোগে জবরদস্তি পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্ক প্রবর্তনের নীতি গ্রহণ করল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় বড় অর্থনৈতিক পÐিতরা এলেন। পূর্ব পাকিস্তানের কৃষিকে শোষণ করে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প গড়ে তোলার নীতি প্রাধান্য পেল। পুঁজিতান্ত্রিক উন্নয়নের নীতি অনিবার্য ভাবে দ্রæত পরিণত হোল দুই ভ‚গোলে বসবসাকারী দুই জনগোষ্ঠির মধ্যে জাতিবাদী সংঘাতে, পুঁজিতন্ত্র যা করে।

কিন্তু আমরা হালকাপাতলা জাতি। গভীরে না গিয়ে আমরা তখন শিখছিলাম দুই অর্থনীতির তত্ত¡ আর কিভাবে পাঞ্জাবিরা বাঙালিদের শোষণ করছে সেই সকল কাহিনী। আংশিক হলেও সেটা মিথ্যা ছিল না। কিন্তু সেটা ইতিহাসের বাইরের দিক, অন্দরমহলের নয়। ভেতর-বাহির যুগপৎ নিয়েই ইতিহাস। কিন্তু আমরা জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠছিলাম। আমাদের বুদ্ধির আলস্য আর জাতিগত আবেগের কারণে এটাই ছিল অবধারিত। টেকনলজি, পুঁজি ও ছাপাখানার ‘মাতৃভাষা’র প্রতি সঙ্গত অনুরাগ ও ভালবাসার কারবারে গড়ে উঠছিল নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির নতুন জাতীয়তাবাদী রাজনীতি। আমরা সকলেই ভেসে গিয়েছিলাম। একটি সময়কালকে বুঝবার জন্য এইসব বিষয় মনে রাখলে ভালো।

তবুও সাহিত্য করাই বুদ্ধিজীবিতা ভাবটা খুব একটা আপত্তিকর মনে হোত না। কিন্তু টের পেতাম কোথাও একটা অভাব থেকে গিয়েছে। আরও খোঁজখবর নেবার, জানবার, বুঝবার বিস্তর এলাকা ফাঁকা পড়ে আছে। সেই সময়, ঠিক সেসময়েই এবনে গোলাম সামাদের একটি লেখা পড়েছিলাম। স্মৃতি দুর্বল কিনা জানি না। মনে হয় বিষয় ছিল নৃতত্ত্ব। লেখাটি ভালো লেগেছিল। এরপর থেকে যখনই হাতে পেয়েছি, তাঁকে পড়েছি। তখন মনে হয়েছিল, ইনি আর দশজনের মতো নন। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যেতে পারেন। ভাবতে সক্ষম। আমি যার কাঙাল ছিলাম। সেই সময়েই তাঁর ‘শিল্পকলার ইতিকথা’(১৯৬০) বইটি বেরিয়ে গিয়েছিল। তিনি বিপজ্জনদের মধ্যে পরিচিত ছিলেন।

আশ্চর্য যে তাঁর সঙ্গে আমার কখনই দেখা হয় নি। তিনি ওবেইদ জাগীরদারের বন্ধু। ওবেইদ ভাই দারুণ মানুষ। বাংলাদেশের সমাজ ও ইতিহাসকে ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে যদি কেউ জানতে বা বুঝতে আন্তরিক হয়ে থাকেন তাহলে ওবেইদ ভাই হলেন সোনার খনির মতো। ওবেইদ ভাই খুবই সামাজিক ও বন্ধুবৎসল, তবে অভিজ্ঞতায় বুঝেছি সবাইকে কাছে টানেন না। তাঁর কাছে এবনে গোলাম সামাদের অনেক গল্প শুনেছি। আমি তাঁকে পছন্দ করি জেনে হয়তো তিনি আমাকে বলতেও উৎসাহিত বোধ করতেন। আমিও ভাল শ্রোতা। শুনতে ভালবাসি। শুনতে শুনতে অলিখিত ইতিহাসের গলিঘুজির মধ্যে হাতড়ালে মণিমাণিক অনেক উঠে আসে।

সামাদ ভাইয়ের শারিরীক অসুস্থতার কথা শুনছি দীর্ঘদিন ধরে। ওবেইদ ভাই বললেন রাজশাহী গেলে দেখা করে আসা উচিত আমার। আমিও গত বছর তাই করলাম বন্ধু মাহবুব সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর বাসায় গিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। তাঁকে দেখে আসার পর আমি ওবেইদ ভাইকে বার বার বলেছি, তাঁর লেখালিখিগুলো তরুণদের হাতের নাগালের কাছে নাই। নাগাল নিশ্চিত করা দরকার। বুদ্ধিজীবিতার ক্ষেত্রে এবনে গোলাম সামাদ নীরবে একা একা চর্চা করে গিয়েছেন। তিনি অলক্ষ্যে থেকে যাবেন সেটা অন্যায়। তিনি রাজি হলেন নিমেষেই। সম্ভবত এবনে গোলাম সামাদের নির্বাচিত কলাম ‘আত্মপক্ষ’ বইটির পরিকল্পনা তাঁর। আবিষ্কার প্রকাশনার দেলোয়ার হাসানকে আবিষ্কারও তাঁর। তাঁকে বইটি প্রকাশের জন্য রাজি করানো ওবেইদ ভাইয়েরই কীর্তি। ওবেইদ ভাই এই ধরণের কাজ নতুন করছেন না। তাঁকে ধন্যবাদ জানাবো না। কিন্তু তথ্যটা জানিয়ে রাখা জরুরী ভেবেছি। তাই লিখে রাখলাম।

কিন্তু আমাকে বইটির শুরুতে কিছু লিখে দেবার দায় চাপিয়ে দেওয়াতে যারপরনাই কুষ্ঠিত হয়ে আছি। লজ্জিতও বটে। এবনে গোলাম সামাদ অগ্রজ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁর বইয়ের শুরুতে আমার কিছু লেখা  মোটেও শোভনীয় নয়। তাঁর সম্পর্কে আমার অনেক কথাই বলার থাকতে পারে। লিখতে হবে। কিন্ত সেটা তাঁর বইয়ের শুরুতে নয়। এই লেখা যখন লিখছি তখন হাতের কাছে তাঁর কোন বইও পাচ্ছি না।

কথা প্রসঙ্গে বলি, এবনে গোলাম সামাদ কৃষিবিদও বটে। পড়েছিলেন ইস্টপাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ইন্সটিটিউটে (এখন নাম শেরে বাংলা কৃষি বিশবিদ্যালয়)। এখান থেকে ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচার ডিগ্রি পাশ করেন ১৯৫৩ সালে। এরপর ইংল্যান্ডে চলে যান। লিডস ইউনিভার্সিটিতে প্লান্ট প্যাথোলজি নিয়ে পড়েন। পোস্ট-গ্রাজুয়েট ডিগ্রি পান ১৯৫৫ সালে। দেশে এসে ১৯৫৫ থেকে ১৯৬০ সাল অবধি কাজ করেন তেজগাঁওয়ের জুট রিসার্চ ইন্সটিটিউটে। প্লান্ট প্যাথোলজিস্ট হিসাবে গবেষণা করেন। আবার চলে যান বিদেশে। এবার ফ্রান্সে। প্যারিসে। সেখানে ব্যাক্টেরিয়াল ভাইরাস নিয়ে মৌলিক গবেষণা করলেন ১৯৬১ সাল অবধি। ভার্সাই কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের কৃষি গবেষণাগারে গবেষক হিসাবে কাজ করেন এক বছর। এরপর দেশে ফিরে আসেন ১৯৬৫ সালে। ১১ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদে চাকুরি শুরু করেন। ‘উদ্ভিদ রোগতত্ত¡’ (১৯৬৬), ‘উদ্ভিদ সমীক্ষা’, উদ্ভিদ জীব রসায়ন নামে বিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর মেলা বইও আছে। প্রফেসর হিসাবে অবসর নিয়েছেন ১৯৯৭ সালে।

দুই

রাজশাহী থাকেন বলে এবনে গোলাম সামাদের সঙ্গে দেখা হয় না। ঢাকায় থাকলেও যে খুব হোত সেই দাবি করি না। সেই অভাব দৈনিক নয়াদিগন্তে তাঁর লেখালিখি খানিক মেটায়। আমিও দৈনিক নয়া দিগন্তে লিখি। তিনিও আমার লেখা পড়েন, আন্দাজ করি। তাছাড়া তাঁর একটি লেখাতে উল্লেখও করেছেন। এই বইয়ে আছে, ‘দিল্লীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ডাক’। আমার এই লেখাটি তাঁকে হতাশ করেছিলো। কারণ আমি দিল্লীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছি, কিন্তু কিভাবে সেটা সম্ভব তার কোন ‘কর্মপন্থা’ পেশ করি নি। ঠিক কথা। বলেছেন, ‘ভারতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সহজ সাধ্য কাজ নয়।’ কাজটা কঠিন, ডাক দিলে হবে না। তবে তিনিও কোন কর্মপন্থা হাজির করেন নি। বুঝলাম, তিনি কর্মপন্থা সন্ধান করছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে পানির অধিকার আর উজান থেকে ভাটিতে বেয়ে আসা নদীর পানি রোধ করে টিপাইমুখসহ অন্যান্য। প্রকল্প মোকাবিলার পথ নিয়ে লেখালিখি হচ্ছিল। খালেদা জিয়া দিল্লীর কাছে টিপাইমুখ সম্পর্কে প্রস্তাব দিয়েছিলেন দুই দেশ মিলে একটা যৌথ জরিপ করুক, তারপর ঠিক হোক টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে কিনা। এরপর সিদ্ধান্ত হবে। এবনে গোলাম সামাদ আশা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যদি খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিতেন তাহলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আস্থার ঘাটতি কমে আসত। এগুলো ২০১১ সালের নভেম্বরের দিকের কথা। হোত কি?

এখন ২০১৪ সালে আমরা দেখছি নিজের অধীন তাঁবেদার সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কারোর উপরই দিল্লীর আস্থা নাই। প্রাচীন ঔপনিবেশিক শক্তি একটি দেশ নিজের দখলে রাখত। দিল্লীও চায় বাংলাদেশ তাদের নিজেদের তাঁবেদারদের দখলে থাকুক। পার্থক্য হচ্ছে বাংলাদেশ কাগজে কলমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে পরিগণিত। বাংলাদেশ দিল্লীর ‘রাজ্য’ নয়, ফলে দিল্লীর কাছে তার মর্যাদা ভারতের রাজ্য সরকারের মতোও নয়। বাংলাদেশীরা ভারতের নাগরিক নয়, ফলে ভারতীয় নাগরিকদের যে ন্যূনতম অধিকার সেটাও দিল্লী মানতে রাজি না। যেমন, ভোট দিয়ে নিজেদের পছন্দের সরকার গঠন করা। দিল্লী যাকে ক্ষমতায় চেয়েছে, তাকেই ছলে বলে কৌশলে ফিরতি ক্ষমতায় বসিয়েছে।

দিল্লী আর ভারত সমার্থক নয়, আমি দিল্লী বিরোধী, ভারত বিরোধী নই। ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের জনগণেরই কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লীর আধিপত্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে। আমার দিল্লী বিরোধিতা তার বেশি কিনা সন্দেহ। অন্যদিকে ভারতে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নাগরিকদের সঙ্গে মৈত্রীকে আমি দিল্লী বিরোধী কর্মপন্থার অংশ মনে করি। দিল্লীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কর্মপন্থা কী হতে পারে রাজনৈতিক দিক থেকে তা ক্রমশ স্পষ্ট হবে, কিন্তু দিল্লীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া বাংলাদেশের জনগণের জন্য অন্য কোন পথ খোলা আছে বলে আমি মনে করি না। সেটা কি রূপ নেবে আমি জানি না। কিন্তু সেটা যে দ্রুত ধেয়ে আসছে সেটা আমি টের পাচ্ছি। অসম ক্ষমতার রাজনীতি, আগ্রাসী সংস্কৃতি, নদী, পানির হিস্যা নিয়ে তর্ক, কাঁটাতারের বেড়া, সীমান্তে ক্রমাগত মানুষ হত্যা, মানুষ পাচার হয়ে যাওয়া, বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের অন্তর্ঘাতী তৎপরতা এবং তার দায় ইসলামি দলগুলোর ওপর চাপানো, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাদের বাংলাদেশ থেকে নিজেদের গোয়েন্দা পাঠিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিস্তর কারণ আছে যাতে এই অঞ্চল যুদ্ধসংকুল হয়ে উঠতে বাধ্য। বাংলাদেশের জনগণ তার জন্য প্রস্তুতি নেবে কিনা, সেটা আলাদা প্রশ্ন। কর্মপন্থা দেওয়া না দেওয়া তখন উঠবে, অবশ্যই। কিন্তু দৈনিক পত্রিকার কলামে আমি এর বেশী কিছু বলতে চাই নি।

সে যাই হোক, আমার মনে হয় না সামগ্রিক ভাবে এবনে গোলাম সামাদের সঙ্গে আমার এই ক্ষেত্রে কোন মৌলিক পার্থক্য আছে। এ লেখাটিতেও সেটা পরিষ্কার। আমি সবসসময়ই তাঁর লেখালিখির সনিষ্ঠ পাঠক। এই বইতে অনেক লেখা আছে যা তথ্য ও বিশ্লেষণ দুই দিক থেকেই মূল্যবান। পড়ে আমি উপকৃত হয়েছি। কয়েকটি লেখা আমার খুবই পছন্দেরও।

কিন্তু আমি আলাদা করে লেখাগুলোর নাম উল্লেখ করবো না। নিজের প্রসঙ্গ আছে বলেই ওপরের লেখাটি নিয়ে দুই একটি কথা বলেছি। আমি নিজে দৈনিক পত্রিকায় লিখি বলে জানি যে একজন লেখককে দুই একটি লেখা পড়ে বিচার করার বিপদ বিস্তর। সবগুলো লেখাই পড়া দরকার। মনে রাখা দরকার লেখাগুলো সাময়িক বিষয়ের ওপর লেখা, অনেক লেখা এবনে গোলাম সামাদ এখন লিখলে হয়তো ভিন্ন ভাবেই লিখতেন। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ সমসাময়িক লেখাগুলো একই সঙ্গে সময়ের ইতিহাসও বটে।

বইটি বেরুচ্ছে, এতে আমি খুবই খুশি। জানি, তাঁর বন্ধু ও গুণগ্রাহীরাও। এবনে গোলাম সামাদ সুস্থ ও সবল ভাবে বেঁচে থাকুন, আমাদের লেখালিখি বুদ্ধিজীবিতার জগতেও সমান ভাবে। এবং সরবে।*

*‘আত্মপক্ষ’ বইয়ের ভূমিকা অংশ।

Like this article?

Leave a comment

জনপ্রিয় লেখাসমূহ

জনপ্রিয় বিভাগসমূহ