কবি দার্শনিক মোহাম্মদ ইকবাল (১৮৭৭-১৯৩৮) তাঁর কবি জীবনের আরম্ভ করেন উর্দু ভাষায় কবিতা লিখে। উর্দু ভাষা সম্পর্কে আমাদের মনে জমে আছে নানা বিভান্তি। তাই উর্দু ভাষা সম্পর্কে প্রথমে দু’এক কথা বলা হবে সথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। উর্দু ভাষার জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশেই। উর্দু বাইরে থেকে আসা কোন ভাষা নয়। হিন্দী আর উর্দু ভাষার মধ্যে ব্যকরণগত কোন পার্থক্য নাই। পার্থক্য হলো ব্যবহৃত শব্দের। উর্দু ভাষায় আরবী ফারশী শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু হিন্দীভাষায় ব্যবহৃত হয় সংস্কৃত শব্দ। তা বলে হিন্দীভাষা সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন হয়নি। হিন্দীব্যাকরণ আর সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ মোটেই এক নয়। ভাষার বিচার করতে হলে আসে তার ব্যাকরণ প্রসঙ্গ। হিন্দীযে সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন হয়নি হিন্দী ব্যাকরণ তার সাক্ষ্য।
সংস্কৃত ভাষা এক সময় লিখিত ভাষা ছিল না। বেদের আরেক নাম শ্রুতি। কেননা বেদ লিখিত গ্রন্থ ছিলো না। বেদের শ্লোক শুনে শুনে মনে রাখতে হতো। বেদ লিখিত গ্রন্থ নয়। যেমন লিখিত গ্রন্থ হলো কুরআন শরীফ। ইসলাম সূচনা থেকেই একটি লিখিত ধর্ম। সম্রাট আশোকের কোন অনুশাসন সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়নি। সম্রাট আশোকের অনুশাসন লিখিত হয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃত ভাষায়। প্রাকৃত ভাষা বলতে বুঝায় কোন অঞ্ছলের স্থানীয় ভাষাকে। সম্রাট আশোকের সময় হিন্দীভাষা ছিল না। হিন্দীভাষায় তার লিখিত কোন অনুশাসন পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে আশোকের আমলে একটা শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে যার বয়স ধরা হয় খৃষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দ। এর ভাষা হলো আশোক প্রাকৃত, যা এক সময় চলতো দক্ষিণ বিহারে। এক বর্ণমালা হলো ব্রাক্ষ্মি; নাগরী নয়। হিন্দীভাষা উদ্ভব হয়েছে বেশ কিছু পরে। বাংলা ভাষার তুলনায় তাঁকে প্রাচীন বলা চলে না। যাকে বলা হয় নাগরী অক্ষর তার উদ্ভব হয়েছে ব্রাক্ষ্মি অক্ষর থেকে। ব্রাক্ষ্মি অক্কগর থেকে বাংলা অক্ষরেরও উদ্ভব হয়েছে, তাই বাংলা ও নাগরী অক্ষরে কিছু মিল আছে। তবে নাগরী অক্ষর থেকে বাংলা অক্ষরের উদ্ভব হয়নি। হিন্দীভাষায় সংস্কৃত ভাষার তুলনায় আছে নিজস্ব শব্দ বেশি। আর এইসব শব্দ উর্দু ভাষাতেও আছে। উর্দু ক্রিয়াপদ আর হিন্দীক্রিয়াপদ এক। লিঙ্গবিধি উভয় ভাষারই এক। উভয় ভাষাতেই বলা হয় ‘বাদল গরজতা হ্যায়’। উভয় ভাষাতেই বলা হয় ‘বিজলী চমকতি হ্যায়’। ‘বাদল’ পুং লিঙ্গ এবং ‘বিজলী’ স্ত্রী লিঙ্গ। উর্দু আর হিন্দী ভাষার মধ্যে শব্দগত পার্থক্য আছে। যেমন- উর্দুতে যখন বলা হয় ‘ইন্তেযার’ সেখানে হিন্দীতে বলা হয় ‘অপেক্শা’। উর্দুতে যেখানে বলা হয় ‘লেকিন’, হিন্দীতে সেখানে বলা হয় ‘পরন্তু’। উর্দুতে যেখানে বলা হয় ‘কম্বখত্’ হিন্দীতে সেখানে বলা হয় ‘মুরখ্’। কিন্তু যে হিণ্ডী ভাষা উত্তর ভারতে সাধারণত প্রচলিত তাতে ‘পরন্তু’ না বলে ‘লেকিন’-ই লোকে বেশি বলে।
সাধারণভাবে মনে করা হয় রাজধানী দিল্লীর কাছে চলতো এক রকম প্রাকৃত ভাষা, যাকে বলা হতো ‘খাড়িবলি’। তা থেকেই উদ্ভব হতে পেরেছে বর্তমান উর্দু ও হিন্দী ভাষা। উর্দু ভাষায় প্রথম কবিতা লেখেন আমির খসরু (১২৫৫-১৩২৫)। কিন্তু প্রথমে উর্দু ভাষার বিকাশ হয়েছে দক্ষিণ ভারতে বাহমানি রাজ্যে; উত্তর ভারতে নয়। বাহমনি রাজ্যে উর্দু ভাষায় প্রথম গদ্যগ্রন্থ লেখেন বান্দা নওয়াব গেসু দরায (মৃ. ১৪৪২)। তার গ্রন্থের নাম ‘মি’ রাজুল আশিকীন’ (প্রেমিকের উত্তরণ)। গোলকুন্ডার বাহমানি সুলতান মোহাম্মদ কলি কুতব শাহ (১৫৯০-১৬১১) উর্দুতে কবিতা লিখেছেন। কবিতা লিখেছেন ফারসী ও তেলেগু ভাষায়। তিনি বিবাহ করেন হিন্দু বাঈজি ভাগ্যবতীকে। বিবাহের পর তিনি ভাগ্যবতীর নাম দেন হায়দার বেগম। যার থেকে হায়দ্রাবাদের নাম হয়েছে। কুতুব শাহ উর্দুতে কবিতা লিখেছেন হায়দারী বেগমের সাথে তার প্রেমের অনুভব নিয়ে। দক্ষিণ ভারত থেকে কবি ওয়ালি মুহম্মদ ওয়ালী (১৬৮৮-১৭৪১) যিনি দক্নি নামে অধিক পরিচিত, আসেন দিল্লীতে। দিল্লীতে উর্দু কবিতা লেখা শুরু হয় আড়িবোলিতে দক্নি উর্দুর প্রভাবে। লেখার অক্ষর হয় ফারসী-আরবী। ফারসী আরবী অক্ষরে উর্দু কবিতা লেখা শুরু হয়েছিল দক্ষিণ ভারতেই। উত্তর ভারতে প্রথম বিখ্যাত কবি হলেন- মির্জা গালিব (১৭৯৭-১৯৯৬)। তিনি উর্দুতে কবিতা লেখেন দিল্লীতে অবস্থান করে। এরপরে উর্দুতে খুব নামী কবি হলেন- মওলানা আলতাফ হুসাইন হালী (১৮৩৭-১৯১৪)। এসময় আরেকজন উর্দু কবি হলেন– মওলানা আলতাফ হুসাইন হালী (১৮৩৭-১৯১৪)। এসময় আরেকজন উর্দু কবি হলেন- মওলানা আলতাফ হুসাইন হালী (১৮৩৭-১৯১৪)। এসময় আরেকজন উর্দু কবি হলেন নওয়াব মির্জা খান দাগ দেহ্লভী (১৮৩১-১৯০৫)। কবি ইকবাল তাঁর উর্দুতে লেখা কবিতা প্রথম দিকে দাগের কাছে পাঠাতেন পরিমার্জনার জন্য।
উর্দুতে কেবল যে মুসলমান কবিরাই কাব্য চর্চা করেছেন তা নয়। হিন্দু কবিরাও করেছেন। তবে হিন্দুরা উর্দুতে সাহিত্য চর্চা করেছেন উর্দু গদ্যকে নির্ভর করে। যেমন – কৃষণচন্দ (১৯১৪-১৯৭৭) উর্দুতে লিখেছেন তার একাধিক বিখ্যাত উপন্যাস ও গল্প। মুসলমানরা উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখার চাইতে উর্দুতে লিখেছেন প্রধানত কবিতা। উর্দুতে প্রথম খুব ভালো গদ্য লেখেন মওলানা আবুল কালাম আযাদ (১৮৮৮-১৯৫৮)। মওলানা আযাদ ছিলেন মওলানা শিবলী নোমানীর (১৮৫৭-১৯১৪) ছাত্র। নোমানী ১৯৯৪ সালে লক্ষ্নৌতে গড়েছিলেন ‘নদওয়াতুল উলামা’ নামক প্রতিষ্ঠান। শিবলী নোমানী ছিলেন ইসলামী পুনরুজ্জীবনবাদী। ইকবাল বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েহিলেন এই দু’জনেরই চিন্তাধারা দিয়ে। তিনি ইসলামের পুনরোজ্জাগরণ চেয়েছিলেন কিন্তু চাননি ইসলামী চিন্তার ধারাবাহিকতাকে একেবারে অস্বীকার করতে। হয়ে উঠতে চানচি পাশ্চাত্য ভাবধারাবাদী হতে। ইকবালের অবস্থা ছিল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী চিন্তার মাঝামাঝি স্থলে। ইকবাল রহস্যবাদের (তাসাউফ) বড় সমালোচক ছিলেন। তবে কবিতা লিখবার সমত তিনি অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণ করেছেন তাদেরই উপমা ও উৎপ্রেক্ষা। ইসলামে শুরা পান নিষিদ্ধ কিন্তু তাসাউফবাদী কবিরা শুরাকে অনেক সময় রুপকভাবে গ্রহণ করেছেন জীবনীশক্তি হিসেবে, ইকবাল তার শেকওয়া কবিতায় বলেছেন- “পাত্র আমার নহে আরবের আরবী শুরায় নিয়েছি পুরে, হোকনা ও গান হিন্দুস্তানী বান্ধিয়াছি সুর হেজাজী সুরে।” ইকবাল শুরাকে প্রাণশক্তির প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছেন এখানে। যদিও শুরা পান ইসলামে জায়েজ নয়।
ইকবাল তার শেকওয়া নামক কবিতা রচনার পর আঞ্জুমানে হেমায়েত ইসলামের এক জলসায় আবৃত্তি করেছিলেন ১৯১১ সালের এপ্রিলে। আর জওয়াবে শেকয়া রচনা করেছিলেন শেকওয়া প্রকাশের দেড় বছর পর ৩ নভেম্বর ১৯১২ সাকে। ইউরোপে থেকে ফিরে আসার পরের সময়কে ধরা হয় ইকবালের কবিজীবনের তৃতীয় যুগ বা পরিপক্কতার যুগ হিসেবে। ইউরোপে তিন বছরের অবস্থান কবি ইকবালের চিন্তা-চেতনাত আমূল পরিবর্তন আনে। এসময়ে রচিত তার উর্দু কবিতার মধ্যে ফারসীর প্রভাব দেখা যায়। তৃতীয় যুগের লেখাগুলো পরিণত বয়সের ফল। তাইতো গভীরতা, বক্তব্যের গাম্ভীর্যতা, চিন্তার সুদূরপ্রসারতা, দিকনির্দেশনার কার্যকরী উপাদান, কাব্যের বলিষ্ঠতা ও শিল্প-মাধুর্যতা তার রচনার পরতে পরতে পরিলক্ষিত হয়। শেকওয়া কবিতায় ইকবাল মুসলমান জাতির দুর্দশা ও অবনতির জন্য আল্লাহর অতি আবদারের সুরে কিছুটা অনুযোগ করেছেন। এতে মুসলিম সুধীমহলে কিছুটা গুঞ্জনও উঠেছিল। তাই পরের বছরই জওয়াবে শেকওয়া নামে অন্য একটি কবিতা লিখে তিনি স্বয়ং মুসলিম জাতির পশ্চাদপদতার কারণ বিশ্লেষণ করেন এবং এর জন্য তাদেরকেই দায়ী করেন। শেকওয়া ও জওয়াবে শিকওয়া যদিও ইউরোপ থেকে ফেরার পরে রচিত তবুও তার কবিজীবনের প্রথম যুগের কবিতা হিসেবে গণ করে বাঙ্গেদারা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আজকে পৃথিবী অনেক বদলে গেছে, কিন্তু এই কবিতা দু’টির ছন্দের দোলা এখনও পাঠককে আকৃষ্ট করে।
একটি হিসাব অনুসারে ইকবাল কবিতায় লিখেছেন প্রায় বার হজার। এই বার হাজার কবিতার মধ্যে সাত হাজার কবিতা তিনি লিখেছে ফারসী ভাষায়। অর্থাৎ ইকবাল উর্দুতে যতো কবিতা লিখেছেন ফারসী ভাষায় লিখেছেন তার অনেক অধিক। ১৯১৫ সালে ইকবাল ফারসী ভাষায় রচনা করেন তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘আসরারে খুদী’। ১৯২০ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসী ভাষার অধ্যাপক আর. এ লিকলসন আসসারে খুদীর অনুবাদ করেন ইংরেজী ভাষায় কাব্যময় গদ্যে। নিকলসনের অনুবাদের মাধ্যনে ইউরোপে ইকবাল পরিচিতি পান। বৃটিশ সরকার ইকবালকে প্রদান করেন স্যার উপাধী। ইকবালের ফারসী ভাষায় রচিত আরেকটী বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম হলো- জাভেদ নামা। ইকবাল এটি রচনা করেন ১৯৩২ সালে। অনেক সমালোচকের মতে জাভেদ নামা হলো ইকবালের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে ইকবাল বলেছেন আদর্শ মানব সমাজ কেমন হওয়া উচিৎ। তার এই মানব সমাজ কেবল যে ইসলামী তা নয়, এটা হতে পারে সবার জন্যেই অনুকরনীয়। ইকবাল এই কাব্যে কবি রুমির সাথে গিয়েছেন মঙ্গল গ্রহে। যেখানে মর্গাজিন নামে একটী শহরের সমাজ জীবনের কাব্যিক বর্ণনা তিনি করেছেন এইভাবে:
যন্ত্রদানবের এমন জোর নেই করবে প্রকৃতিকে পালন
আকাশ সেই দেশে ধোঁইয়ায় ধোঁয়াকার নয়,
কেবলই খাটছে যে কিষাণ, পাচ্ছে সে
প্রদীপে উজ্জ্বল আলে
তাদের নেই কোন জমির মালিকের ভয়।
তাদের কৃষিকাজ সে নয় নিশিদিশি
জলের চিন্তায় ম্লান
তাদের ফসলে তো অন্য কারো নেই হাত
সে দেশে কোনখানে সৈন্য নেই কোন,
নেই বা ব্যুহ নির্মাণ
খুনে বা সংঘাতে তাদের জুটছে না ভাত।
মিথ্যে লেখা আর মিথ্যে রটনার ছলে
মর্ঘদিনে কোন লেখক মর্যাদা পাননা
বাজারে বেকারেরা ভরে না পথ কোলাহলে
কানের পীড়া নেই আর্ত ভিগিরীর কান্নায়’। (অনুবাদঃ শঙ্খ ঘোষ)
বাংলাভাষায় প্রথম ইকবালকে নিয়ে আলোচনার সুত্রপাত করেন বিখ্যাত কবি অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-১৯৮৬)। অমিয় চক্রবর্তী এসময় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব। তিনি লাহোরে যান এবং ইকবালের সাহিত্য প্রসঙ্গে গ্রহণ করেন একটি সক্ষাতকার। যা পরে তিনি ছাপিয়ে প্রকাশ করেন কোলকাতার কোন সাহিত্য প্রত্রিকায়। শঙ্খ ঘোষ একজন খুবই প্রথিতযশা বাংলা ভাষার কবি (৫ ফেব. ১৯৩২)। তিনি ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তূলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক। তাকে ভারত সরকার ২০১৬ সালে প্রদান করেছেন জ্ঞানপিঠ পুরষ্কার। জ্ঞানপিঠ হলো ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পুরষ্কার। যা প্রদান করা যেতে পারে একজন বুদ্ধিজীবীকে। শঙ্খ ঘোষ এই পুরষ্কার লাভ করেছেন। শঙ্খ ঘোষের আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তিনি জন্মেছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান চাঁদপুর জেলায়। তিনি পাবনা জেলায় লেখাপড়া শেখেন এবং সেখান থেকে পরীক্ষা দিয়ে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর তিনি চলে যান পিতামাতার সঙ্গে কোলকাতায়। লেখাপড়া করেন কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। বাংলায় সেখান থেকে বি.এ পাশ করেন এবং পরে বাংলায় এম.এ পাশ করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শঙ্খ গোষের মতে ইকবালের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হলো জাভেদ নামা। ইকবাল তার এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই থাকবেন স্মরণীয় হয়ে। শঙ্খ ঘোষ কোলকাতা থেকে প্রকাশিত যুগান্তর পত্রিকার ১৯৯৫ সালের শারদীয় সংখ্যায় ‘কেন ইকবাল’ নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন, যা সে সময় পশ্চিম বঙ্গের চিন্তক সমাজে হতে পেরেছিলো যথেষ্ট আলোচ্য।
শঙ্খ ঘোষের মতে– ইকবাল ইসলামপন্থী ছিলেন কিন্তু ইসলামকে তিনি দেখেছেন মানবমুক্তির পথ হিসেবে। তার ইসলামী চিন্তা ছিল বিশ্বজনীন। তিনি ইসলামকে দেখেছেন একটি সামাজিক শক্তি হিসেবে। যে শক্তির কাম্য হলো একটি আদর্শ মানব সমাজ সৃষ্টি।
সাহিত্য রচনার আছে দু’টি দিক। একটি দিক হলো– তার বক্তব্য, আর অপর দিক হলো- তার রুপকলার। বক্তব্য উন্নত হলেই যে তা উন্নয় সাহিত্যের পদবাচ্য হয় তা নয়। তার প্রকাশরীতি হতে হয় এমন যে, তা মানুষের মনে পারে সাড়া জাগাতে। সব সাহিত্যের বিচারে তাই বক্তব্যের সাথে আসে তার রুপকলারও আলোচনা। কবিতার মাধুর্য ফুটে ওঠে তার ছন্দে। কিন্তু এখন উর্দুতে কবিতা আর আগের মতো সমিল ছন্দে লেখা হচ্ছেনা। উর্দু কবিরাও লিখছেন প্রধানত গদ্য কবিতা। গদ্য কবিতাকে উর্দু ভাষায় বলে আষাদ নযম। উর্দু কবিতা এখন ইসলামিক ভাবধারা দ্বারা প্রভাবিত নয়। কবিরা এখন বিভিন্ন দর্শনে আস্থাশীল; তাদের বক্তব্যে থাকছে বিভিন্ন দর্শনের প্রভাব। তবে উর্দু কবিতা আগের মতো বক্তব্যপ্রধান হয়ে নেই। উর্দু কবিতা হয়ে উঠেছে চিত্রপ্রধান। কবিতায় কবিরা আঁকতে চাচ্ছেন মানব আবেগের চিত্র। নানা প্রকার রুপকল্পের (metaphor) মাধ্যমে।
লেখাটি নেয়া হয়েছে, মোহাম্মদ সুলতান অনূদিত শেকওয়া ও জওয়াবে শেকওয়া’র ভূমিকা থেকে।বইটি প্রকাশিত হয়ছে মার্চ, ২০২১।