ফেনী নদীর পানি

ছবিঃ বিবিসি

ফেনী নদী কোন বরফ গলা পানি বহন করে না। বহন করে কেবলই বৃষ্টির পানি। আর এই বৃষ্টির পানি ভারতের মাটি থেকে চুঁইয়ে আসেনি। ফেনী নদীর পানির উৎস বাংলাদেশের বৃষ্টির পানি।

ব্রিটিশ শাসন আমলে তখনকার বাংলা প্রদেশে ছিল পাঁচটি বিভাগ। এর মধ্যে একটি ছিল চট্টগ্রাম বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা- চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা ও নোয়াখালী। যাকে বলা হতো ত্রিপুরা, তার জেলা শহর ছিল কুমিল্লা। এখন যাকে বলা হচ্ছে ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা, ব্রিটিশ শাসন আমলে তাকে বলা হত পার্বত্য ত্রিপুরা। ব্রিটিশ শাসন আমলে ছিল ব্রিটিশ ভারতের সরকারের করদ-মিত্র রাজ্য। পার্বত্য ত্রিপুরার রাজা বাঙ্গালী ছিলেন না। ছিলেন ত্রিপুরী। ত্রিপুরীরা মানব ধারার দিক দিয়ে হল বিশেষভাবেই মঙ্গোলীয়। আর এরা যে ভাষায় কথা বলে, তাকে স্থাপন করা হয় চীনা-তিব্বতি উপভাষা পরিবারে। ভাষাটা হলো আসামে প্রচলিত বোড়োদের ভাষাদের মতো। পাকিস্তান হওয়ার পর সাবেক ত্রিপুরা জেলার নাম হয় কুমিল্লা।

অন্যদিকে ভারত পার্বত্য ত্রিপুরা দখল করে ১৫ অক্টোবর ১৯৪৯ সালে। পাবর্ত্য ত্রিপুরা ভারতে যোগ দিতে চেয়েছিল না। ভারত রাজ্যটি তাই দখল করে। এ সময় থেকে পার্বত্য ত্রিপুরার নাম থেকে পার্বত্য কথাটা বাদ পড়ে। প্রথমে ত্রিপুরা হয় ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। পরে তা স্বীকৃতি পায় একটা অঙ্গরাজ্যের। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার পর, সাবেক কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলা থেকে বহু বাঙ্গালী হিন্দু ত্রিপুরায় যেয়ে বসতি স্থাপন করে। এখন ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগ দাঁড়িয়েছে বাংলাভাষী। ত্রিপুরী যাদের মাতৃভাষা, তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতকরা ২৫ ভাগ। আর বাদবাকি হলো ভারতের অন্য ভাষার মানুষ। কিছুকাল আগে ধর্মের দিক থেকে ত্রিপুরার জনসংখ্যার শতকরা ৭৬ ভাগ ছিল হিন্দু। শতকরা ২০ ভাগ মুসলমান। শতকরা ৩ ভাগ বৌদ্ধ। আর শতকরা ১ ভাগ খ্রিষ্টান।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিপুরাকে ফেনী নদীর পানি প্রদানে সম্মত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি এটা দিতে রাজি হয়েছেন মানবিক কারণে। ত্রিপুরা ফেনী নদী থেকে পানি নেবে পরিশুদ্ধ করে পান করার জন্য, সেচের কাজে ব্যবহার করবার জন্য নয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমরা তো ফেনী নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে ত্রিপুরাকে বিক্রি করতে পারতাম। এভাবে ত্রিপুরাকে ফেনী নদীর পানি দেওয়া হচ্ছে কেন? আমরা যদি ভারতের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারি, তবে ভারত আমাদের কাছ থেকে পানি কিনতে পারবে না কেন? ভারতকে এভাবে ফেনী নদীর পানি গ্রহণ করতে দিলে আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুসারে ফেনী নদীর পানির উপর ভারতের একটা দাবি স্বীকৃতি পাবে।

প্রথম প্রকাশিত বিডিভিউজে, ২০২০ সালে।

Like this article?

Leave a comment

জনপ্রিয় লেখাসমূহ

জনপ্রিয় বিভাগসমূহ