সিপিবি বলছে, আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ বাঙালি হওয়ার কথা। কিন্তু দলটি বুঝিয়ে বলছে না, বিশুদ্ধ বাঙালি বলেতে ঠিক কী বুঝতে হবে। সিপিবির মূল রাজনৈতিক দর্শন মার্কসবাদ লেনিনবাদ। যাতে জাতিসত্তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। মার্কসবাদের অন্যতম বক্তব্য হলো, মানুষের ইতিহাস শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস। মার্কসবাদে জাতিসত্তার দ্বন্দ্ব স্বীকৃতি পায়নি। অন্য দিকে, লেনিন বলেছেন, জাতিসত্তার দ্বন্দ্ব ব্যাপারটা জড়িত হলো পুঁজিবাদের সাথে। কিন্তু পৃথিবীতে যখন পুঁজিবাদ ছিল না, তখনো জাতিসত্তার দ্বন্দ্ব ছিল। এক জাতি আরেক জাতিকে দখল করে করতে চেয়েছে তার ওপর রাজত্ব। বিশাল রোম সাম্রাজ্য আর যাই হোক পুঁজিবাদভিত্তিক ছিল না।
মার্কস পুঁজিবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যা নির্ভর করে জটিল যন্ত্র ও ভাড়াটে শ্রমিকদের ওপর (Large-scale machine industry based on hired labour)। রাশিয়া একটা পুঁজিবাদী দেশ ছিল না। কিন্তু ছিল তার বিরাট সাম্রাজ্য। লেনিনের একটা বই আছে, যার ইংরেজি অনুবাদের নাম হলো Imperialism: the Highest Stage of Capitalism| লেনিন তার এই বইতে ব্রিটিশ ও ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু রুশ সাম্রাজ্যবাদের করেননি।
ব্রিটিশ, ফরাসি ও ডাচ সাম্রাজ্যবাদের সাথে রুশ সাম্রাজ্যবাদের একটা বড় পার্থক্য ছিল, তা হলো ব্রিটিশ ফরাসি ও ডাচ সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারিত হয়েছিল সমুদ্রপথে। পান্তরে রুশ সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটেছিল স্থলপথে। আমরা শুনতে পেতাম সোভিয়েত ইউনিয়নে জাতিসত্তার দ্বন্দ্ব বলে আর কিছু নেই। সব জাতিসত্তা সেখানে ভোগ করছে সমান অধিকার। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন ভেঙে পড়েছে এবং এই ভেঙে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে সৃষ্ট জাতিসত্তার দ্বন্দ্ব।
রুশ এবং ইউক্রেনিয়াদের মধ্যে এখন চলেছে রক্তঝরা সঙ্ঘাত। যেটাকে মার্কসবাদ লেনিনবাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশেই সিপিবি বলছে, বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদ হতে হবে রাজনীতির ভিত্তি। কেন আজ এই বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন তারা টেনে আনছে, সেটা নিয়ে অনেকের মনে দেখা দিচ্ছে প্রশ্ন। একেকটি জাতি গড়ে ওঠে ইতিহাসের ধারায়। নানা ঘটনা ঘাত প্রতিঘাতে। আজকের পৃথক রাষ্ট্র বাংলাদেশের উদ্ভব হয়েছে একটা বিশেষ ইতিহাসের ধারায়। যেটাকে অস্বীকার করতে গেলে আর খুঁজে পাওয়া চলে না বাংলাদেশের পৃথক অস্তিত্বের ভিত্তি। থাকে না কোনো লোকাস স্ট্যান্ডাই (Locus Standi)। পাকিস্তান না হলে আজকের রাষ্ট্র বাংলাদেশের উদ্ভব কখনোই হতে পারত না। সাবেক পাকিস্তান হওয়াটা যদি যৌক্তিক হয়ে থাকে, তবে সেই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হওয়াটার কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। বাঙালি হিন্দু বাংলা ভাষাভাষী হলেও কখনোই চাইনি একটা পৃথক বাংলা ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে। যদি তারা সেটা চাইত তবে ১৯৪৭ সালে, তারা সমর্থন করতে পারত শরৎচন্দ্র বসু ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্বাধীন যুক্ত বাংলার দাবিকে। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তখনকার বাংলার বিধান সভায় কমিউনিস্ট এমএলএ ছিলেন তিনজন। এই তিনজন এমএলএ’র মধ্যে একজন ছিলেন বিখ্যাত জ্যোতিবসু। এরা তিনজনই তদানীন্তন বাংলার বিধানসভায় ভোট দিয়েছিলেন বাংলা ভাগের পক্ষে বাংলা হয়েছিল বিভক্ত। অথচ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন আশ্চর্যজনকভাবে যুক্ত বাংলারই পক্ষে। এসব ইতিহাস এখন ভুলে যাওয়া হচ্ছে। আওয়াজ তোলা হচ্ছে বিশুদ্ধ বাঙালি হওয়ার।
অথচ খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করে এগিয়ে আসতে চাচ্ছিল পাকিস্তানের একটা অংশকে দখল করে নিতে এবং আরব সাগরের তীরে একটি বন্দর ও নৌঘাঁটি করতে। এ সময় ১৯৮০ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় সিপিবি তার এক জনসভায় ঘোষণা করেছিল, বাংলাদেশে আফগান স্টাইলে বিপ্লব করতে হবে। সেদিন সে বলেনি বিশুদ্ধ বাঙালি হওয়ার কথা। কিন্তু এখন বলছে। বাংলাদেশের বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা অজয় রায়ের মৃত্যুর পর এ দেশে কিছু কথিত বাম বুদ্ধিজীবীকে বলতে শোনা গেল, অজয় রায়ের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে। কেননা তিনি চির দিনই করেছেন গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম। অথচ অজয় বাবু আমরা যতদূর জানি, করেছিলেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগান অভিযানকে সমর্থন। যার সাথে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছিল না কোনো সুদূর যোগাযোগ। সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছিল প্রধানত পাক বাহিনীর সাথে। পাক বাহিনী আফগানিস্তানে খারাপ যুদ্ধ করেনি। পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে মারা যায় প্রায় ১৮ হাজার রুশ সৈন্য। যতগুলো কারণে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়েছে, তার মধ্যে একটি কারণ হলো এই যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মূলে ছিল, যাকে বলা হয় সনাতন রুশ উষ্মপানির নীতি।
জারদের শাসন আমলে রাশিয়া চেয়েছে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে এসে আরব সাগরের তীরে বন্দর গড়তে। রাশিয়ার বেশির ভাগ বন্দর বরফমুক্ত নয়। সেখানে শীতকালে সমুদ্রের পানি জমে বরফ হয়ে বিপত্তি ঘটায় নৌ চলাচলে। তাই রাশিয়া অনেক দিন আগে থেকেই চেয়েছে আরব সাগরের তীরে একটি বন্দর গড়তে, যা সব সময় থাকবে বরফমুক্ত অবস্থায়। তার এই নীতিকে তাই বলা হয় উষ্মপানির নীতি। জন্মলগ্ন থেকেই এই উপমহাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তার নীতিনির্ধারণে সমর্থন দিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থকে। একসময় হিটলারের সাথে স্টালিনের অনাক্রমণ চুক্তি হয়। জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে তার পূর্বভাগ দখল করে নেয়। রাশিয়া পোল্যান্ড আক্রমণ করে দখল করে নেয় তার পশ্চিম ভাগ। এ সময় এই উপমহাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সোভিয়েত ইউনিয়নকে সমর্থন করে। কিন্তু হিটলার যখন ১৯৪১ সালের ২২ জুন সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করে বসে, তখন এই উপমহাদেশের কমিউনিস্টরা জাপানের সাথে ব্রিটেনের যুদ্ধকে বলে জনযুদ্ধ। তারা ব্রিটেনকে পূর্ণভাবে সাহায্য সহযোগিতায় অগ্রসর হয়। ব্রিটেনকে আর বলে না একটা সাম্রাজ্যবাদী দেশ। ব্রিটিশ শাসন তাদের কাছে হয়ে ওঠে শ্রেয়। এসব কথা বলতে হচ্ছে কেননা সিপিবি বলছে, তারা হচ্ছে এ দেশের একমাত্র দেশপ্রেমিক দল। যে দাবিকে তাদের অতীত ইতিহাস সমর্থন জোগায় না।
আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বিশেষভাবে শ্রদ্ধা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সামাজিক মর্যাদা হলো সর্বাধিক। সম্প্রতি তাজউদ্দীন স্মারক বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছেন (প্রথম আলো ৩০ অক্টোবর ২০১৬), মুজিব-তাজউদ্দীন দূরত্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা দুঃখজনক ঘটনা। এই অধ্যাপকের মতে, শেখ মুজিব ছিলেন অনেক বড় মাপের মানুষ। তিনি দেশের মানুষের পাশে থাকতেন, তাদের মনের কথা বুঝতেন। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন ছিল তার অনেক কিছুই শেখ মুজিবের মধ্যে ছিল না। অন্য দিকে, তাজউদ্দীনের বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতা ছিল অসাধারণ। তার এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে আমরা তা জানি না। কেননা, তাজউদ্দীন ভারত সরকারের সাথে চুক্তি করেছিলেন বাংলাদেশের কোনো পৃথক সেনাবাহিনী থাকবে না, থাকবে কেবল মিলিশিয়া। যাদের কাজ হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রা। তিনি আরো চুক্তি করেছিলেন, বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের সময় সেটা করবে ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে (হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর সাাৎকার : মাসুদুল হক; বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র’ এবং সিআইএ। পৃষ্ঠা ১৪১-১৪৩। প্রচিন্তা প্রকাশনী, ঢাকা। ফেব্র“য়ারি ২০১০। এখানে উল্লেখ্য যে, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দিল্লি মিশন প্রধান। তিনি তাই ভিতরের অনেক কথাই জানতেন)।
অধ্যাপক আকাশ এসব ব্যাপারে অবগত নন বলেই মনে হচ্ছে তার বক্তব্য থেকে। শেখ মুজিবের সাথে তাজউদ্দীনের বিরোধের বাস্তব কারণ ছিল। শেখ মুজিব মানতে রাজি হননি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের এই চুক্তিকে। তাজউদ্দীন সম্পর্কে বাংলাদেশের এককালের বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা মোহাম্মদ তোয়াহা বলেছেন : তাজউদ্দীন বরাবরই কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। যদিও তাজউদ্দীন বাহ্যত আওয়ামী লীগ করতেন। কিন্তু প্রকৃতপে আমাদের সাথেই জড়িত ছিলেন। পার্টির সিদ্ধান্তেই তাকে আওয়ামী লীগে রাখা হয় (দ্রষ্টব্য : মহান একুশে সুবর্ণজয়ন্তী গ্রন্থ। পৃষ্ঠা ১৪৪৪। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, ঢাকা। ২০০৮)। এ থেকে বোঝা যায়, অধ্যাপক আকাশ যাকে বলছেন একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ, তিনি ছিলেন একজন কমিউনিস্ট। যাদের নীতিনির্ধারিত হতো সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থের কথা বিশেষভাবে বিচার বিবেচনা করে। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্টরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক দল হয় পিকিংপন্থী। আরেক দল হয় মস্কোপন্থী। তাজউদ্দীন ছিলেন মস্কোপন্থী। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারণে থেকেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ প্রভাব। এতে কাজ করেনি তাজউদ্দীনের কোনো ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপক আকাশ তাই যা বলেছেন, তা নিয়ে থাকছে বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ।
ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খুব ঘটা করে পুলিশ পাহারায় চার দিন ধরে সিপিবির ১১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এতে বিদেশ থেকে এসেছিলেন একাধিক অতিথি, যাদের সাথে বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবোধের কোনো যোগাযোগ নেই। সম্মেলনে ইসলামি মৌলবাদ সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হলো। বাংলাদেশের মুসলমানেরা ঠিক মৌলবাদী নন। তবে তারা তাদের ধর্মকে ভালোবাসেন এবং তাদের মধ্যে বিরাজ করছে একটা মুসলিম উম্মাহ চেতনা। কমিউনিস্টরা যেটার বিশেষ বিরোধী। কমিউনিস্টরা মানব ইতিহাসে ইসলামের কোনো ঐতিহাসিক অবদানকে স্বীকার করে না। অনেক অদ্ভুদ কথা বলতে শোনা গেল বিদেশী কমিউনিস্টদের। যেমনÑ রাশিয়া থেকে আগত রুশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিকে বলতে শোনা গেল, বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সাহায্য করছে পথঘাট নির্মাণে অর্থ দিয়ে। কিন্তু গরিবের বাড়িঘর নির্মাণে তারা কোনো সাহায্য করছে না। অথচ তার দেশ রাশিয়া এ দেশের দরিদ্র সর্বসাধারণের বাড়িঘর তৈরির জন্য কোনো ঋণ না দিয়ে, বাংলাদেশের রূপপুরে গড়ছে পারমাণবিক শক্তিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে নিন্দা করা হলো। কিন্তু এ দু’টি রাষ্ট্রকে বলতে হবে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। কেননা এরা বাংলাদেশের তিকর কিছু করেনি। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে যে বিরাট দুর্ভি হয়, তাতে খাদ্য সাহায্য পাঠিয়েছিল কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, কেবল তাদেরই ছিল সেই মতা এবং ইচ্ছা। সৌদি আরবও আমাদের তিকর কিছু করেনি। সে দেশে আমাদের দেশ থেকে বহু মানুষ গিয়ে কাজ করছে। করছে অর্থ উপার্জন। সৌদি আরব আমাদের শ্রমশক্তির অন্যতম মূল গ্রাহক।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে ইসলাম। এটা কোনো একটা নজিরবিহীন ঘটনা নয়। কেননা, বাংলাদেশের অনেক আগেই মালয়েশিয়া ইসলামকে করেছে রাষ্ট্রধর্ম। একসময় মালয়েশিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি হয়ে উঠেছিল খুবই শক্তিশালী। কিন্তু এখন তা হয়ে উঠেছে প্রায় অস্তিত্বহীন। মালয়েশিয়ার শতকরা দশ ভাগ অধিবাসী হলো ভারতের তামিল বংশোদ্ভব হিন্দু। তারা মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার জন্য একটা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে, এমন নয়। বাংলাদেশের শতকরা দশ ভাগ হলো অমুসলমান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার কারণে তারাও যে দুর্বিপাকে পড়তে যাচ্ছে, এমন ভাবার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ আসলে হলো একটা দণি-পূর্ব এশিয়ার দেশ। বাংলাদেশ এখন মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় দলে দলে বৌদ্ধরা ইসলাম গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ এখন মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হতে পেরেছে, ঐতিহাসিকদের মতে, দলে দলে বৌদ্ধরা ইসলাম গ্রহণেরই জন্য। বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে কমিউনিস্ট পার্টির বুদ্ধিজীবীদের যথেষ্ট জ্ঞান আছে বলে মনে হয় না। ইসলামকে তাই তারা দেখতে চাচ্ছেন ভয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে। অথচ বাংলাভাষী মুসলমানেরা না থাকলে আজকের বাংলাদেশের উদ্ভবই হতে পারত না।
শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা প্রকাশ করেছেন (২০১২) তার পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী। যাতে শেখ মুজিব বলেছেন, তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। সভা করি, বক্তৃতা করি। খেলার দিকে আর নজর নেই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নেই। তিনি আরো বলেছেন, মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধীকে তিনি (শেখ মুজিব) দিয়ে আসেন মুসলিম মহিলাদের স্তন কর্তনকৃত ছবি। এই ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটেছিল ১৯৪৭ সালে কলকাতায় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার সময়। শেখ মুজিব তার আত্মজীবনীতে আরো বলেছেন, আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো ‘আমরা মুসলমান’ আরেকটা হলো ‘আমরা বাঙালি’। শেখ মুজিবের বাঙালির ধারণা আর সিপিবির বাঙালির ধারণা মিল খাচ্ছে না। নিকট ভবিষ্যতে তাই সিপিবির সাথে ভাবনৈতিক সঙ্ঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে।
দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৫ নভেম্বর ২০১৬।