মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন মার্কিন জাতীয়তাবাদ প্রবল হয়ে উঠেছে, যা আগে কখনো ছিল না। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করেননি। তিনি এই জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তাকে বলা চলে, তার সময়ের প্রতিধ্বনি (echo sonore)| শুনছি, মার্কিন কংগ্রেস নাকি এখন এমন একটি আইন করতে যাচ্ছে, যা প্রণীত হলে যুক্তরাষ্ট্রকে বেরিয়ে আসতে হবে জাতিসঙ্ঘ থেকে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি জাতিসঙ্ঘ বা ইউএনওতে না থাকে, তবে ইউএনও টিকবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আইন করছেন না, করতে যাচ্ছে মার্কিন কংগ্রেস। সেখানে অবশ্য এখন আছে মার্কিন রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাধিক্য। রিপাবলিকান পার্টি যেমন এক দিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে পেরেছে, একই সময়ে একই কারণে হতে পেরেছে মার্কিন কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। এ থেকেও প্রমাণিত হতে পারছে, মার্কিন জনমত হয়ে উঠেছে জাতীয়তাবাদী। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর মধ্যে এখন সবচেয়ে ধনী এবং সামরিক দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী, তাই এ জাতীয়তাবাদের গতিপ্রকৃতির উপলব্ধি আমাদের জন্য হয়ে উঠেছে আবশ্যিক।
‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ পড়লাম (১২ ফেব্র“য়ারি ২০১৭), যাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তুলনা করা হয়েছে হের হিটলারের সাথে। এর আগে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান জগতের প্রধান, পোপ অনুরূপ ইঙ্গিত করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জার্মানি আর বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো তুলনা করা চলে না। যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র পেয়েছে দৃঢ় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে জাতীয়তাবাদের উদয় হয়েছে, তাকে বলতে হয় গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদ। অন্য দিকে, জার্মান জাতীয়তাবাদ ছিল আগ্রাসী। জার্মানরা বলেছিল, পাঁচ কোটি ইংরেজ যদি পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষকে শাসন করতে পারে, তবে আট কোটি জার্মানের কেন কোনো সাম্রাজ্য থাকতে পারবে না? কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উঠছে না কোনো সাম্রাজ্য বিস্তারের আওয়াজ। মার্কিন জাতীয়তাবাদ সীমিত থাকছে বিশেষভাবে ভৌগোলিক সীমানার মধ্যেই। ল্যাটিন আমেরিকা থেকে, বিশেষ করে মেক্সিকো থেকে, অবৈধভাবে মানুষ এসে ভরে যাচ্ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওরা ধর্মে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতকায় ইংরেজিভাষী প্রটেস্টান্ট খ্রিষ্টানদের এটা মনোপূত হচ্ছিল না।
মার্কিন জাতীয়তাবাদের উদ্ভবের এটা বিশেষ কারণ। ট্রাম্প বলছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে প্রাচীর তুলবেন, যাতে করে অবৈধভাবে মেক্সিকানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবিষ্ট হতে না পারে। এরকম দাবি মার্কিনিরা অনেক আগেই করতে শুরু করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সীমান্তে অনেক জায়গাজুড়ে আছে গ্রিল। এখন বাদবাকি জায়গায় গাঁথবার কথা হচ্ছে প্রস্তর প্রাচীর। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছেÑ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে কোনো সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের কথা ট্রা¤প বলেননি এবং এখনো বলছেন না। কেননা, কানাডা থেকে দলে দলে অভিবাসী এসে ভরে তুলতে চাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রকে। ধর্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হয়ে আছে। এ পর্যন্ত একমাত্র ফিটজেরাল্ড কেনেডি ছাড়া আর কোনো ক্যাথলিক খ্রিষ্টান মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাত্র তিন বছর। প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই ঘাতকের গুলিতে তিনি নিহত হন। তার মৃত্যু এখনো হয়ে আছে যথেষ্ট রহস্যময়। কেনেডির ছোট ভাই রবার্ট কেনেডি হতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তিনি নির্বাচনী প্রচারের সময় ঘাতকের গুলিতে নিহত হন। মার্কিন জাতীয়তাবাদ তাই চিহ্নিত হওয়া উচিত শ্বেতকায় ইংরেজিভাষী প্রটেস্টান্ট জাতীয়তাবাদ হিসেবে। এই জাতীয়তাবাদের আদি উৎস খুঁজতে হলে যেতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইংল্যান্ড বলে পরিচিত অংশের ইতিহাসে; ইংল্যান্ড থেকে পিউরিটান খ্রিষ্টানরা Mayflower নামক পালতোলা জাহাজে করে ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দে সেখানে গিয়ে প্রথম উপনিবিষ্ট হন। এই উপনিবেশ স্থাপনকারীদের সাধারণভাবে বলা হয় Pilgrim Fathers| এরা ছয়টি উপনিবেশ গড়েছিলেন। এ ছয়টি উপনিবেশ হলো, মেইনে, ভেরমন্ট, ম্যাসাচুসেট, রোড আইল্যান্ড, নিউহ্যাম্পশায়ার এবং কানেকটিকাট। এরপর গ্রেট ব্রিটেন থেকে আরো অনেক লোক গিয়ে গড়ে আরো সাতটি উপনিবেশ। এভাবে ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের উপনিবেশের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ১৩টি।
এই ১৩টি উপনিবেশের মানুষ ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেট ব্রিটেনের বিপক্ষে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ফলে সূচনা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধের। তা চলেছিল সাত বছর। ১৭৮৩ তে ব্রিটেন যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে মার্কিন স্বাধীনতাকে মেনে নেয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট ব্রিটেনের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়, কিন্তু গ্রেট ব্রিটেনের প্রতি থেকে যায় তার একটা মানসিক দুর্বলতা। এ কারণে দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের পক্ষ নিয়েই যুদ্ধ করেছে। বর্তমানে ব্রিটেন চাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করতে যাচ্ছে প্রধানত এ কারণেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মধ্যে নিকট স¤পর্ক গড়ে উঠলে সব ইংরেজি ভাষাভাষী অঞ্চলে সৃষ্টি হতে পারে এক নতুন কর্মতৎপরতা। আর অর্থনীতিতে আসবে বিশেষ গতিশীলতা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হাওয়ার আগেই গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। বলেছিলেন, গ্রেট ব্রিটেনের উচিত হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিত্যাগ করা। বর্তমানে তাই দেখা গেল, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গ্রেট ব্রিটেনে আসার রাজকীয় নিমন্ত্রণ জানালেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন বেশ কিছু বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আছেন। এর মানে হচ্ছে মার্কিন জাতীয়তাবাদের এ রূপকে তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। তারা করছেন মার্কিন জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা। এই বিরোধিতা হতে পারে তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিলাতেও বহু বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতকে দেখা গেল ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করতে। মনে হয়, তারাও করছেন একই রকম ভুল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাদাকালোর সমস্যা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে বহু কৃষ্ণাঙ্গকে নিয়ে গিয়ে সেখানে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রীতদাসপ্রথা উঠিয়ে দিতে গিয়ে ঘটেছিল ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ (১৮৬১-১৮৬৫)। যুদ্ধে জিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দাসপ্রথা তুলে দিতে সক্ষম হন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের বংশধররা এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কুড়াচ্ছেন ব্যাপক ঘৃণা ও অবহেলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তারা এখনো উল্লিখিত হচ্ছেন আফ্রো-আমেরিকান হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ আফ্রো-আমেরিকান। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আফ্রো-আমেরিকানরা ডোনাল্ড ট্রা¤পকে যত না ‘বর্ণবাদী’ বলছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি বলছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিকরা। কোনো দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাইনি। তবে লোকপরম্পরায় যত দূর জেনেছি, তাতে মনে হয়Ñ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতদের সাথে মনে হয় আফ্রো-আমেরিকানদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বাংলাদেশীরা তাদের করছেন ঘৃণা। এ ক্ষেত্রে তারাও হয়ে উঠেছেন শ্বেতকায় মার্কিনিদের মতোই বর্ণবাদী। আফ্রো-আমেরিকানদের কঠোর কায়িক পরিশ্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়েছে সম্পদশালী। আফ্রো-আমেরিকানরা সৃষ্টি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জ্যাজ সঙ্গীত। তাদের রচিত ও সুর দেয়া গান, যা পরিচিত নিগ্র অ্যাস্পিরিচুয়াল হিসেবে, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুবই আদৃত। আফ্রো-আমেরিকানরা মার্কিন সংস্কৃতিতে রেখেছেন তাদের অবদান। কিন্তু বাংলাদেশে থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তারা ওই দেশের সংস্কৃতিতে কোনো অবদান যোগ করেননি।
পরলোকগত কবি শহীদ কাদরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ দিন ছিলেন। কিন্তু তিনি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবিতা লিখেছেন বাংলা ভাষায়। ব্রিটিশ শাসনামলে ধনগোপাল মুখোপাধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ইংরেজি ভাষায় লিখেছিলেন একটি বিখ্যাত উপন্যাস। কিন্তু আমরা সেখানে গিয়ে ইংরেজি ভাষায় কোনো সাহিত্যচর্চা করিনি। করতে চেয়েছি কেবলই রাজনীতির চর্চা। এই রাজনীতির চর্চা সে দেশে আমাদের অনেক আগে যাওয়া মানুষের বংশধরদের কাছে কোনো নৈকট্য সৃষ্টি করতে পারেনি। আমরা এখন করছি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিন্দা। রাজনৈতিক দিক থেকে এটাকে প্রাজ্ঞতার পরিচায়ক বলে ধরা যেতে পারে না।
বিএনপি একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুইজন সাংবাদিক পাঠানো হয়েছিল হিলারি ক্লিনটনের পক্ষ হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে। কিন্তু হিলারি হেরেছেন আর ট্রাম্প জিতেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মার্কিন নির্বাচনে ছিল নিরপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে তারা পেরেছে রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচয় দিতে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, বিশ্ব জলবায়ুতে যে পরিবর্তন আসার কথা বলা হচ্ছে, তা যদি সত্যিও হয়, তবে সেটা ঘটছে প্রাকৃতিক কারণে; মানুষের কার্যকলাপে নয়। তিনি তাই বলেছিলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিশ্ব জলবায়ু রক্ষার তহবিলে মার্কিন চাঁদা দান বন্ধ করবেন। তিনি যদি এটা করেন, তবে মনে হয় তিনি একটা খুব ভালো কাজই করবেন। কেননা, এতে বন্ধ হবে জলবায়ু রক্ষার নামে অতিমাত্রায় ব্যয়ের বহর। প্রত্যেকটি জাতি মনোযোগ দেবে তাদের নিজ নিজ দেশের নিবারণযোগ্য সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টায়।
আমাদের দেশে সুন্দরবন রক্ষার যে আন্দোলন চলছে, সেটা বন্ধ হবে। কেননা, এর জন্য বিদেশ থেকে যে অর্থ আসছে, থাকবে না তার উৎস। বনভূমি সব দেশের জন্যই দরকার। বনভূমিকে সব দেশই কাজে লাগাচ্ছে। ভূমি থেকে যে গাছ কাটা হচ্ছে, তার জায়গায় আবার রোপণ করা হচ্ছে নতুন গাছের চারা। বনভূমিকে ব্যবহার করতে হবে। সেই সাথে থাকতে হবে তার নবায়ন ব্যবস্থা। কিন্তু সে দিকে নজর না দিয়ে কেবল বনভূমি রক্ষার কথা বলা একান্তভাবেই অর্থহীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাল গোর আমাদের উপদেশ দিচ্ছেন সুন্দরবন রক্ষার জন্য। যে বন তিনি নিজে কোনো দিন দেখেননি অথবা যার সম্পর্কে তার কোনো অনুশীলনই নেই। অ্যাল গোর ছিলেন বিল ক্লিনটনের সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। বিল ক্লিনটনের পর তিনি দাঁড়িয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য। কিন্তু হেরেছিলেন ওয়াকার বুশের কাছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি জলবায়ু রক্ষার আন্দোলন সমর্থন করে। কিন্তু রিপাবলিকান পার্টি তা করে না। কেননা, তারা মনে করেন, এই আন্দোলন নিরর্থক। কেননা মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ুতে পরিবর্তন আসছে না। আমাদের দেশের অনেকে মনে করেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি হলো সমাজতন্ত্রী। আর রিপাবলিকানরা হলো ধনতন্ত্রী। কিন্তু এ দুটি দলকে ঠিক এভাবে ভাগ করে বিচার করা যায় বলে মনে হয় না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার হেলথ কেয়ার কর্মসূচি বাতিল করেছেন। কেননা, এই পরিকল্পনায় সরকারকে দিতে হতো বিপুল ভর্তুকি। কিন্তু সরকারের টাকা আসে কর প্রদানকারীদের কাছ থেকে। ভর্তুকি দিতে হলে সরকারকে বাড়াতে হয় করের মাত্রা। এই হেলথ কেয়ার পরিকল্পনা চালাতে হলে সরকারকে বাড়াতে হতো করের মাত্রা। আর এই করের মাত্রা বাড়ালে স্বল্প আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কারণ তাদের দিতে হতো তাদের কর দেয়ার ক্ষমতার চেয়ে বেশি মাত্রায় কর। বিলাতে লেবার পার্টি অনুরূপ হেলথ কেয়ার চালু করেছিল। কিন্তু শেষে তারা এর ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে তুলে দিতে বাধ্য হয়। জনকল্যাণ কাম্য। কিন্তু সে জন্য তাদের ওপর অযৌক্তিক করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া বাঞ্ছিত হতে পারে না। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি চেয়েছে কতকটা বিলাতের লেবার পার্টির মতো হতে। কিন্তু সেটা হতে যেয়ে তারা করতে চাচ্ছিল একই রকম ভুল। বামপন্থা হয়ে উঠতে চায় শেষ পর্যন্ত স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার জন্য কষ্ট প্রদানের উৎস। সারা পৃথিবীতে এ জন্য এখন বাম রাজনীতিতে নেমেছে ধস। আমরা চোখের ওপর দেখলাম বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়তে। চীনে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় থাকলেও এখন তারা আর কমিউনিস্ট দর্শনে বিশ্বাস করে না। আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির জন্য অনুসরণ করা হচ্ছে বাজার অর্থনীতির পথ। অথচ আমাদের দেশে বামপন্থীরা যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো সমালোচনা করতে ব্যস্ত ধনতন্ত্রী দেশ হিসেবে। বলা হচ্ছে, ধন সেখানে কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে মাত্র কিছু ব্যক্তির হাতে। কিন্তু এখনকার দিনে ধনী ব্যক্তিরা টাকাকড়ি মাটিতে পুঁতে রাখেন না, রাখেন ব্যাংকে। ব্যাংকে গচ্ছিত তাদের টাকা ব্যাংক খাটায় ব্যবসাবাণিজ্যে। ধন তাই আগের মতো যে কেন্দ্রীভূত হয়, তা কিন্তু নয়। অন্য দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে মনোপলিবিরোধী আইন। যুক্তরাষ্ট্রে ধনতন্ত্র রাষ্ট্রিক নিয়ন্ত্রণহীন (Hands-off Capitalism) নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন পরিষদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা আছে। আপাতত মনে হচ্ছেÑ নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে দেখা দিতে চাচ্ছে ক্ষমতার ভারসাম্যের অভাব। অনেকে বলছেন, ট্রা¤প প্রশাসন চালাতে পারবেন না। কেননা, বিচার বিভাগ হয়ে উঠেছে তার বিরোধী। কিন্তু মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে আছেন ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তি। তারা চাইবেন না অযথা ট্রা¤পকে বিপদগ্রস্ত করতে। ট্রাম্পের পক্ষে আছে বিপুল জনসমর্থন। মার্কিন সর্বোচ্চ আদালত কখনো চাইবে না এ জনমতকে ক্ষেপিয়ে তুলতে। এটাই মনে করা যায়। ডোনাল্ড ট্রা¤প এ পর্যন্ত এমন কিছু করেননি, যাকে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের প্রতিকূল। অথচ বাংলাদেশের বেশির ভাগ পত্রপত্রিকা ঢালাওভাবে করে চলেছে ট্রা¤েপর বিরূপ সমালোচনা। যে কারণেই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি পরিচালিত পত্রিকাগুলো হয়ে উঠেছে ট্রা¤েপর সমালোচনায় মুখর। ইহুদি পত্রিকার ট্রাম্প সমালোচনার সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিলছে আমাদের দেশের অনেক পত্রপত্রিকার সমালোচনার বহর। এটা বেশ বিস্ময়কর।
প্রকাশিত হয় নয়াদিগন্তে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭