মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি যুক্ত রাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হন। প্রত্যেকটি অঙ্গরাজত্বের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার ভার ন্যাস্ত থাকে সেই অঙ্গরাষ্ট্রের গভর্নরের উপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নয়।
গত ২৫ মে পুলিশি হেফাজতে গ্রেফতাকৃত কৃষ্ণাঙ্গ টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড মারা যান মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের পুলিশের হাতে। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কোনো হাত ছিলো না। কিন্তু আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকায় খবর ছাপা হচ্ছে এমনভাবে, যা পড়লে মনে হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ভয়ঙ্করভাবে কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষী। ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের উইঘুর ও হুই মুসলমানদের পক্ষ গ্রহণ করছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প রোহিঙ্গা মুসলমানদের পক্ষ গ্রহণ করেছেন। তথাপী ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের সংবাদ মাধ্যমে জানি না কেন হতে যাচ্ছেন বিশেষভাবেই সমালোচিত। যেটা হওয়া উচিত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাদা-কালোর বিরোধ ছিল, আছে এবং আরও অনেকদিন ধরে থাকবে বলে মনে হয়। যা ডোনাল্ড ট্রাম্প সৃষ্টি করেননি। কিন্তু আমাদের সংবাদমাধ্যমে এমনভাবে সংবাদ সরবরাহ করা হচ্ছে যেন ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ভয়ঙ্কর বর্ণবাদী। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে নির্বাচিত হন মার্কিন জাতীয়তাবাদকে নির্ভর করে, কোনো প্রকার বর্ণবাদী চেতনাকে নির্ভর করে নয়। তিনি বলেন, মেক্সিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রাচীর তুলবার কথা। হিলারী ক্লিনটন হেরে যান। এই হেরে যাওয়র একটা কারণ, তিনি নারী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট এখনও চায় না নারী নেতৃত্ব।
আমাদের সংবাদ মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাদা-কালোর বিবাদের কথা খুব ঘটা করে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু মার্কিন মিত্ররা এখন চাচ্ছেন না এশিয়া থেকে বেশি অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। যে কারণেই হোক, তাঁরা দেখাচ্ছেন বিশেষভাবে এশীয় অভিবাসী বিরোধী মনোভাব। বিষয়টি আমাদের দিক থেকে বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন।
আফ্রো-আমেরিকানরা যেভাবে দোকানপাট লুট করছেন, সেটা তাঁদের প্রতি বিশ্বাসীদের সহানুভূতিকে বিনষ্ট করতেই যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে তারা কায়িক শক্তির জোরে কাবু করে ফেলতে পারবেন বলে মনে করার কোনো বাস্তব ভিত্তি নাই। শীঘ্রই তাঁরা হয়ে পড়বেন তাঁদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
জর্জ ফ্লয়েড ছিলেন একজন খুবই অসৎ প্রকৃতির ব্যক্তি। তিনি কালো ছিলেন বলেই অন্য কালো মানুষকে তার মৃত্যু নিয়ে আন্দোলন ও অরাজকতা করতে হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের যে পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু ঘটেছে, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের আইন অনুসারে তিনি চাকুরীচ্যুত হয়েছেন এবং রাষ্ট্রিক আইন অনুসারে তাঁর বিচার হতে যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস অনুশীলন করলে আমরা দেখি, ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বজায় ছিল দাসপ্রথা। পশ্চিম আফ্রিকা থেকে নিগ্রোদের ধরে নিয়ে বিক্রি করা হতো আমেরিকাতে। আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণ-মার্কিনীরা সকলেই হলেন এদের বংশধর। কিন্তু তাঁরা যদি চান সাদা মার্কিনীদের উপর অতীতের অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে, তবে সেটা সম্ভব হবে না। কেননা সামরিক শক্তিতে সাদা আমেরিকানরা হয়ে আছে তাঁদের তুলনায় বহুগুণে শক্তিশালী।
বর্তমান বাস্তব অবস্থানকে বিশ্লেষণ করেই গ্রহণ করতে হবে তাঁদের উপস্থিত রাজনৈতিক পরিকল্পনা। না হলে তাঁদের হতে হবে বিশেষভাবেই পরাজিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি যুক্ত রাষ্ট্র, যেখানে সকলেই বিনা লাইসেন্সে সাব-মেশিনগান আত্মরক্ষার প্রয়োজনে নিজের কাছে রাখতে পারে। আফ্রো-আমেরিকান বা নিগ্রো-আমেরিকানদের হাতেও অস্ত্র আছে। কিন্তু তা দীর্ঘ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যায় নয়।
শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীরা এই আফ্রো-আমেরিকান অভ্যুত্থানের কারণে এখন বিশেষভাবেই ঝুঁকে পড়তে চাইবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই দিকে। যদিও ট্রাম্প ছিলেন না বা এখনও নন বর্ণবাদী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একজন শ্বেতকায় মার্কিন মহিলা, হ্যারিয়েট এলিজাবেথ বিচার স্টো (Harriet Elisabeth Beecher Stowe), একটি বই লেখেন Uncle Tom’s Cabin (১৮৫২) বলে। এই বইটিকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কালো মানুষ কেনা-বেচার বিপক্ষে সৃষ্টি হতে পেরেছিল তীব্র জনমত। সাদা মানুষ কালো মানুষকে নিয়ে ভাবেননি যে তা নয়। আর এখনও অনেকেই তাঁদের কথা ভাবছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। গণতান্ত্রিক উপায়েই এখানে রাষ্ট্রিক ক্ষমতার হাতবদল হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় অস্পষ্ট দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন জাতীয়তাবাদ এর আগে এতোটা স্পষ্ট ছিল না। এখন যতটা হয়ে উঠেছে।
প্রথম প্রকাশিত হয়েছে, বিডিভিউজ নামক একটি অনলাইন পোর্টালে, ২০২০ সালে।