মানুষ এক সময় সব দেশেই কৃষিকাজ করেছে পিতৃপুরুষের কাছ থেকে শিখে। সে শিক্ষা চলেছে বংশপরম্পরায়। কৃষি শিক্ষার জন্য কোনো বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার কথা কোনো দেশেই ভাবা হয়নি। যাকে বলা হয় বৈজ্ঞানিক কৃষি তা হলো মাত্র শ’তিনেক বছরের ঘটনা।
এর আগে সচেতনভাবে পরীক্ষামূলক গবেষণা করে চাষাবাদের উন্নয়নের চেষ্টা কোনো দেশ করেনি। ১৭৩৩ সালের কাছাকাছি ইংল্যান্ডে জেথরো টাল (Jethro Tull) ঘোড়ায় টানা বীজ বপন ও আগাছা তোলার যন্ত্র আবিষ্কার করেন। ইনি ছিলেন একজন কৃষক। তার উদ্ভাবিত বীজ বপন ও আগাছা উত্পাদন যন্ত্র বিলাতে কৃষি উত্পাদন বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সূচনা হয় কৃষিতে একটা বিরাট অগ্রগতি।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে জার্মানির বিখ্যাত রসায়নবিদ জুস্টাস-ফন-লিবিগ (J. Von liebig) বিশেষভাবে প্রবর্তন করেন জমিতে কৃত্রিম সার প্রয়োগবিধি। অস্ট্রিয়াতে গ্রেগর জোহান মেন্ডেল (Gregor Johann Mendel) আবিষ্কার করেন সঙ্করায়নের নিয়ম। যার ওপর নির্ভর করে শুরু হয় উচ্চফলনশীল উদ্ভিদ প্রজনন। এ হলো কৃষিতে বিজ্ঞানের ভিত্তি। মানুষ এর আগে সচেতনভাবে কৃষি উন্নয়নের কথা চিন্তা করেনি। উন্নয়ন ঘটেছে অবচেতনভাবে। মানুষ ক্ষেতে ফসলের ভালো অংশ রেখেছে বীজ হিসেবে। এর ফলে হতে পেরেছে ভালো বীজ বাছাই ও তার সংরক্ষণ। কিন্তু সচেতনভাবে নির্বাচন ও সঙ্করায়নের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল বীজ উত্পাদনের চেষ্টা ইউরোপে আরম্ভ হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে।
আমরা ছিলাম ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে। পাশ্চাত্যের কৃষি বিজ্ঞানের ধ্যান-ধারণা এই উপমহাদেশে এসে পৌঁছায় তাদেরই প্রচেষ্টায়। তাদের অবদানকে আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা ইতিহাস। ইংরেজ আমলে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ঢাকার তেজগাঁয় স্থাপিত হয় ধান গবেষণা কেন্দ্র। এখানে ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ জিপি হেক্টরের (G.P. Hector) নেতৃত্বে ধান নিয়ে খুবই উচ্চমানের গবেষণা হয়। এখানে উত্পন্ন হয় লাটি শাইল ধান। পরে যা ব্যবহৃত হয় ইরি ধান উদ্ভাবনে।
তেজগাঁ ধান গবেষণাগারের সঙ্গেই ইংরেজ আমলে স্থাপিত হয় উচ্চমানের সরকারি কৃষি খামার। যার লক্ষ্য ছিল উন্নত কৃষি প্রণালীর জ্ঞান বিস্তার। ইংরেজ আমলে সরকারি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে চেষ্টা করা হয় উন্নত কৃষি প্রণালী সম্পর্কে, কৃষককে সচেতন করার। দেশে অনেক রাজনৈতিক আন্দোলন হচ্ছিল। যার একটা প্রভাব এসে পড়েছিল কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে। ১৯৩৫ সালে পাস হয় ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’। এই অ্যাক্ট অনুসারে ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় তদানীন্তন বাংলার প্রাদেশিক আইনসভার (Legislative Assembly) নির্বাচন। এতে একে ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টি অনেক আসন লাভ করে। কৃষক-প্রজা ও মুসলিম লীগ মিলে গঠিত হয় তখনকার বাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা। যার প্রধানমন্ত্রী হন ফজলুল হক। তিনি ১৯৩৮ সালে তেজগাঁ কৃষি খামারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন দ্য বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। যার লক্ষ্য ছিল বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে কৃষিকর্মের শিক্ষা প্রদান এবং কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ কৃষিবিদ তৈরি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম বদলিয়ে করা হয় ইস্ট বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। আমি ও ড. নওয়াজেশ আহমদ ছিলাম এই কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। এখান থেকে আমরা পাস করে বের হই ১৯৫৩ সালে। বাংলাদেশ হওয়ার পর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হয় বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট। এখন এটা পরিণত হয়েছে একটা স্বতন্ত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর নাম হয় শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। জনাব ফজলুল হক এক সময় পরিচিত হন শের-ই-বাংলা হিসেবে (শের-ই-বঙ্গাল= বাংলার বাঘ)। আমার মতে এই নাম যথার্থ হয়েছে।
ইংরেজ আমলে ইংরেজরাও চাচ্ছিল এদেশে দুর্ভিক্ষ নিবারণের জন্য খাদ্যশস্যের উত্পাদন বাড়াতে। আর চাচ্ছিল আর্থিক আয় বাড়ানোর জন্য অর্থকরী ফসলের উত্পাদন বৃদ্ধি করতে। আর এজন্য তারা চাচ্ছিল উপযুক্ত কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে। কিন্তু ফজলুল হক সাহেব উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেই উন্নতমানের কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখনকার বাংলার রাজধানী কলকাতার কাছে স্থাপিত না হয়ে হয় ঢাকা থেকে চার মাইল দূরে তেজগাঁয়। ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর চেষ্টায় ১৯২১ সালে স্থাপিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলেই পূর্ব বঙ্গের মুসলমান সমাজে একটা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব হতে পারে। আর জনাব ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্ভর করে প্রথম মুসলমান সমাজে সৃষ্টি হতে পারে কিছু সংখ্যক কৃষিবিদ। এর একটা বিশেষ তাত্পর্য আছে আমাদের ইতিহাসে। সেটাকে এখন অনেক সময় ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন ঢাকা আজকের মতো মেগা সিটি ছিল না। আর তেজগাঁ ছিল প্রকৃত প্রস্তাবে গ্রাম। তেজগাঁয় আমাদের ছাত্রজীবন কেটেছে গ্রামীণ পরিবেশে। সেটা এখন আর নেই। নেই সেই বিরাট তেজগাঁ কৃষি খামার, যা দেখে আমরা কৃষি সম্পর্কে শিখেছিলাম অনেক কিছু। বলতে গেলে পেয়েছিলাম উন্নত কৃষি শিক্ষা। কীভাবে ফসল নিয়ে গবেষণা করতে হয় তার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা। আজ আর সেই কৃষি খামার নেই। সেখানে স্থাপিত হতে পেরেছে বাংলাদেশের সংসদ ভবন। আর ঢাকার তেজগাঁ থানা হয়ে পড়েছে কার্যত ঢাকার মেগা সিটিরই অংশ। খুব অল্প সময়েরই মধ্যে একেবারে বদলে গেছে এর সমগ্র দৃশ্যপট।
তেজগাঁয় যাদের সঙ্গে কৃষিবিদ্যা পড়েছিলাম, নওয়াজেশ ছিল তাদের থেকে নানাভাবেই ভিন্ন। নওয়াজেশ কেন কৃষিবিদ্যা পড়তে এসেছিল জানি না। আমার মনে হয়, অন্য কিছু পড়লেও তাতে সে দিতে পারত কীর্তির পরিচয়। হতে পারত খ্যাতিমান অধ্যাপক। অনেক সহজে অনেক কিছু বুঝতে ও আয়ত্ত করতে পারত সে। তার ছিল বহুবিধ গুণ। সে খুব ভালো বাংলা গদ্য লিখত। বাংলায় সে সময় গল্প লিখেছে সে। আর যতদূর জানি, তা ছাপাও হয়েছে। তবে তার বিশেষ শখ ছিল ফটো তোলা। সে অবসর সময়ে মেতে থাকত ক্যামেরা নিয়ে। আজ এদেশে সে যত না কৃষিবিদ হিসেবে পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিচিত ফটোশিল্পী হিসেবে। তবে একজন কৃষিবিদ হিসেবেও নওয়াজেশ অর্জন করেছিল যথেষ্ট সুনাম। সে হতে পেরেছিল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার একজন উপদেষ্টা। আর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উপদেষ্টা হিসেবে সে কাজ করেছে লাওস, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মতো দেশে। আমাদের মতো এসব দেশেরও প্রধান খাদ্যশস্য হলো ধান। আর আমাদের দেশের মতো এদেরও জলবায়ু হলো মৌসুমি (Monsoon Climate)। নওয়াজেশ এসব দেশে নিয়ে গেছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ কৃষি অভিজ্ঞতা।
পৃথিবীর অর্ধেক লোকের প্রধান খাদ্যশস্য হলো ধান। পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ ধান উত্পন্ন হয় এশিয়াতে। একটি হিসাব অনুসারে চীন, ভারত, জাপান ও বাংলাদেশে সারা পৃথিবীর মোট ধানের শতকরা ৭০ শতাংশ উত্পাদিত হয়। ধান উত্পাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে চীন, দ্বিতীয় স্থান ভারতের, তৃতীয় স্থান জাপানের আর চতুর্থ স্থান বাংলাদেশের। বাংলাদেশের কৃষক যত কম খরচে যত ধান উত্পন্ন করে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের কৃষক তা পারে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের কৃষককে তার এই কৃষি দক্ষতার জন্য প্রশংসা করতে হয়। মাত্র কিছু কৃষিবিদের উপদেশে তারা যে এই দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে, সেটা সত্য নয়। তাদের ধান চাষের পেছনে কাজ করে চলেছে কয়েক হাজার বছরের ধান চাষের অভিজ্ঞতা।
অনেকে মনে করেন, ধান চাষ আরম্ভ হয়েছিল বাংলাদেশ ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে। কারণ এই অঞ্চলে বুনো ধান আপনা থেকেই এখনও যথেষ্ট হয়। আর এই বুনো ধান থেকেই উদ্ভব হতে পেরেছে আবাদি ধানের। তবে এখনও অনেকে বলেন, চীন হলো ধান চাষের আদি ভূমি। তবে বাংলাদেশে যে অনেক প্রাচীনকাল থেকেই ধানের আবাদ হচ্ছে তা আর বিতর্কের বিষয় নয়। এদেশের মানুষ খেয়েছে ভাত। নদী-নালা, খাল-বিলে হয়েছে প্রচুর মাছ। এদেশের মানুষ করেছে মত্স্য শিকার। মাছ-ভাত হয়েছে এদেশের মানুষের বস্তুগত সংস্কৃতির বুনিয়াদ। নওয়াজেশ বিদেশে বাংলাদেশের কৃষি অভিজ্ঞতাকে নিয়ে গিয়েছিল। আশা করা যায়, নওয়াজেশের নিয়ে যাওয়া অভিজ্ঞতা অন্য দেশের কাজে লেগেছে। তবে ঠিক কতটা, তথ্যের অভাবে আমরা তার মূল্যায়ন করতে সক্ষম নই।
লাওস, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের মতো দেশের কৃষি সমস্যা ঠিক আমাদের দেশের মতো নয়। যদিও এদের প্রধান খাদ্যশস্য ধান এবং জলবায়ু আমাদেরই মতো। এসব দেশের কৃষিতে দেখা দিয়েছে কৃষকের অভাব। কৃষকের অভাবে থাকছে অনেক জমি অনাবাদি। উদাহরণত বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের কথা। মিয়ানমারে অনেক জমি অনাবাদি হয়ে থাকছে কৃষকের অভাবে। সে যদি বিশেষ চুক্তি করে তার পতিত জমি আবাদের জন্য বাংলাদেশ থেকে কৃষক নেয়, তবে উভয় দেশই উপকৃত হবে। বর্তমানে এরকমই ভাবছে অনেকে।
১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতিসংঘ (United Nations)। আর তার অঙ্গ সংগঠন, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (F.A.O = Food and Agriculture Organization)। যার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি। তার এই ফল একেবারেই যে ফলেনি তা নয়। কিন্তু অধিকাংশ দেশের কৃষক হলো গরিব। তারা কেবল সেই সব উন্নতকৃত কৌশলকেই গ্রহণ করতে পারছে, যাদের জন্য বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। পুঁজির অভাব এখনও হয়ে আছে বহু দেশেই কৃষি উন্নয়নের অন্তরায়। কৃষকের আর্থিক সঙ্গতির কথা বিবেচনায় না নিয়ে তাদের উন্নত কৃষি প্রণালী সম্পর্কে উপদেশ দিলে ভুল করা হয়। বিশেষজ্ঞদের অনেক উপদেশ তাই কাজে আসতে পারেনি, আর আসছেও না।
কৃষি উত্পাদন বাড়াতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই থাকছে ক্ষতির সম্ভাবনা। যেমন, আগের যেসব ধানের আবাদ করা হতো, তার তুলনায় উচ্চফলনশীল ধান মাটি থেকে গ্রহণ করছে প্রায় তের গুণ বেশি পুষ্টি-উপাদান। জমিতে যথাযথভাবে সার প্রদান না করতে পারলে তা হয়ে উঠছে অনুর্বর। আগে সাধারণ ধান চাষ করতে যা খরচ পড়ত, উচ্চফলনশীল ধান আবাদ করতে গিয়ে পড়ছে তার তুলনায় বহুগুণ বেশি। খরচ আর লাভের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই থাকছে না সঙ্গতি। ফলে কৃষক বিশেষ করে স্বল্পবিত্ত কৃষক পড়ছে বিপাকে।
এশিয়ার অনেক দেশেই বিগত ৫০ বছরের মধ্যে এসব সমস্যার উদ্ভব হতে পেরেছে। বিশ্ব কৃষি ও খাদ্য সংস্থা দিতে পারছে না যার বাস্তব সমাধান। কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। কিন্তু ভুললে চলে না, কৃষি শেষ পর্যন্ত একটি ব্যবসা। কৃষক যদি লাভজনকভাবে ফসল উত্পাদন না করতে পারে তবে কৃষিতে উত্পাদন বৃদ্ধি-প্রচেষ্টা সাফল্য পেতে পারে না; বিশেষ করে বর্তমানে প্রচলিত মুদ্রাপ্রধান বেচাকেনার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় (Price System)।
নওয়াজেশ ছিল একজন খ্যাতনামা কৃষিবিদ। সে ছিল বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত। তাই তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে এসে গেল সমকালীন কৃষি সমস্যা সম্পর্কে কিছু বিষয়। তাকে নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমে আমরা বলেছি এদেশের কৃষি শিক্ষার ইতিহাস। কারণ নওয়াজেশ তার জীবনের এক পর্যায়ে করেছে কৃষি বিষয়ে অধ্যাপনা। আর এর মূলে আছে একটা বিশেষ ইতিহাস। যেটার কথা খুব বেশি আলোচিত হয় না।
নওয়াজেশের সঙ্গে আমি তেজগাঁয় তিন বছর পড়েছি। থেকেছি একই ছাত্রাবাসে, পাশাপাশি ঘরে। সেখানকার ছাত্রজীবনের শেষে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আর থাকেনি। দেখা হয়েছে আকস্মিকভাবে মাত্র কয়েকবার। তার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর তাই বিশেষভাবে জাগছিল তেজগাঁয় আমাদের ছাত্রজীবনেরই স্মৃতি। চোখে ভেসে উঠছিল তখনকার নওয়াজেশের কথা। একজন আশাবাদী প্রাণবন্ত যুবকের চেহারা। সে রুটিনমাফিক পড়াশোনা করত অনেক নিষ্ঠার সঙ্গে। কিন্তু অবসর সময়ে মেতে থাকত ক্যামেরা নিয়ে। তুলত মাঠ, গাছপালা আর আকাশের মেঘের ছবি। সে অনেক সময় লিখত গল্প। নওয়াজেশ কেন সাহিত্যচর্চা ছেড়েছিল, জানি না। কিন্তু ফটোগ্রাফি সে কখনও ত্যাগ করেনি। তার তোলা ছবি সম্পর্কে, নওয়াজেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু জানার সুযোগ পেয়েছি। তার অনেক আলোকচিত্রের মধ্যে আছে ফটো সাংবাদিকতার প্রভাব। কিন্তু আবার অনেক আলোকচিত্রের মধ্যে ফুটে উঠেছে একটা সাধারণ গল্প বলার মেজাজ। যে ছবি গল্প বলে, মানুষ তার দিকে সহজে আকৃষ্ট হয়।