বাংলাদেশে আমরা যখন তৈরি পোষাক শিল্প কারখানা করোনার ভয়ে বন্ধ রাখতে চাচ্ছি, তখন ভিয়েতনাম তার তৈরি পোষাক শিল্প কারখানা বন্ধ না রেখে চালিয়ে চলেছে পূর্ণ উদ্যমে, বিদেশের বাজারে বিক্রির জন্য। মনে হচ্ছে, এরকম চলতে থাকলে তৈরি পোষাক শিল্পের বাজার চলে যাবে ভিয়েতনামের হাতে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।
দিন যতই যাচ্ছে, ততই আমাদের প্রতীতি হচ্ছে যে, করোনা ভাইরাস চীন কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভব করেছে জীবাণু যুদ্ধের জন্য। জার্মান পত্রিকা এই খবরের বিশেষ প্রমাণ দিচ্ছে। জার্মানীর ‘DER SPIEGEL’ সাময়ীকিতে নতুন করে বলছে এই কথা। জার্মান পত্রিকা ‘ডেস স্পিজে’ আজেবাজে খবর ছাপায় না, পত্রিকাটি খুবই নির্ভরযোগ্য। পত্রিকাটির খবরে আরও বলা হয়েছে যে, চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বলেছিল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কিছু না বলতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ববাসীকে তাই যথাসময়ে এ বিষয়ে সতর্ক হতে কিছু বলেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলছেন, তার একটা অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিশ্ববাসীকে কোন আগাম খবর দেয়নি কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা চীনের কাছে থেকে গ্রহণ করেছেন মোটা অংকের উৎকোচ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিত্যাগ করেছে। এই সংস্থা আর কয়দিন টিকবে, বলা যাচ্ছে না।
১৯৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছিল Status Of Forces Agreement (SOFA) করতে। কিন্তু বাংলাদেশ এতে রাজি হয়েছিল না। আমরা, পত্রিকার কলাম লেখকরা, চেয়েছিলাম না এই চুক্তি হোক। কারণ আমরা মনে করেছিলাম, এই চুক্তি করলে চীন বৈরি হয়ে উঠবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের SOFA চুক্তির মতো কোনো চুক্তি হলে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার হতে পারবে।
আমাদের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারিত হওয়া উচিত আমাদের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে। আজ সমস্ত বিশ্ব জনমত চীনবিরোধী হয়ে উঠেছে। আর আছে তার সঙ্গত কারণ। ভারত-চীন সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। অরুণাচলে ভারত-চীন সংঘাত শুরু হতে পারে। ভারত তখন চাইতে পারে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে অরুণাচলে সৈন্য নিয়ে যেতে। সেটাও হতে দেওয়া উচিত হবে না, বাংলাদেশের আপন স্বার্থের কথা বিবেচনা করে। আমরা যদি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে SOFA চুক্তির মতো কোনো চুক্তি করি, তবে সেটা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য সবদিক থেকেই হবে উত্তম। ঐতিহাসিক কারণেই চীন ভিয়েতনামের প্রতি যতটা সহানুভূতিশীল হতে পারে, বাংলাদেশের প্রতি তা হতে পারে না।
ঐতিহাসিক এবং ভৌগলিক অবস্থানের কথা বিবেচনায় রেখে নির্ধারিত হওয়া উচিত আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। আমাদের দেশে আমরা যে ধরণের কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গরোধ নীতি অনুসরণ করতে চেয়েছি, সেটা আগাগোড়াই ছিল ভুল। করোনার মৃত্যুর চাইতে এখন দেশে মানুষের অনাহারে মৃত্যুর শঙ্কাটাই বেশি প্রকটিত হচ্ছে। মানুষের শ্রমে সৃষ্টি হয় সম্পদ। মানুষকে ঘরে আটকে রাখলে সম্পদ সৃষ্টি হতে পারে না। আমরা দেশবাসীকে ঘরে আটকে রেখেছি।
প্রথম প্রকাশিত বিডীভিউজে, ২০২০ এ।