মানুষ সুন্দর জিনিস বানিয়ে এবং দেখে আনন্দ পায়। নকশিকাথা সেলাইয়ের মূলে আছে এই একই সনাতন ইচ্ছা। কাথা বলতে বোঝায় কতগুলো কাপড় সেলাই করে তৈরি আস্তরণ বা শীতবস্ত্র। নকশিকাঁথা বলতে বাসায় নানা রঙের সুতা সেলাই করে নকশা তোলা কাথা আর আরবিতে ‘খাইতুন মানে সুতা। ‘খাইয়াত’ মানে সেলাইকারী। আর ‘খাইয়াত’ মানে সেলাই। আমরা যাকে বলি ‘কাঁথা’ নবাবগঞ্জের আঞ্চলিক বাংলায় তাকে বলে ‘খেতা’। হতে পারে শব্দটার উৎপত্তি ঘটেছে আরবি থেকে। তবে সাধারণত অভিধান প্রণেতারা মনে করেন সংস্কৃতি ‘কন্থা’ শব্দ থেকে কাঁথা শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে। অবশ্য মনে রাখতে হবে গ্রীয়ার সনের মতে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে মাগধি প্রাকৃত থেকে, সংস্কৃত ভাষা থেকে নয়। সংস্কৃত ভাষা উত্তর ভারতে প্রচলিত কোন একটা বিশেষ প্রাকৃত ভাষাকে সংস্কার করেই উদ্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশে মহাস্থান গড়ে সম্রাট অশোকের যে শিলালিপিটি পাওয়া গিয়েছে, তা অশোক প্রাকৃতে ও ব্রহ্মি লিপিতে লেখা, সংস্কৃত ভাষায় নয়। তথাপি বলা হয়, ‘কন্থা’ থেকেই কাঁথা শব্দের উদ্ভব ঘটেছে। আর সেই টাই হলো সাধারণ প্রচলিত মত। দীনেশ চন্দ্র সেন, বাংলার লোক-সাহিত্য ও শিল্পকলা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছিলেন। পুরান দিনের বাংলার কাঁথা নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে তিনি বলেছেন :
“যে সকল শাড়ি পুরাতন হইয়া ছিঁড়িয়া যাইত, তাহা ফেলিয়া না দিয়া নিম্ন শ্রেণীর এবং সময়ে সময়ে বিপন্ন মধ্যবিত্ত অবস্থার গৃহলক্ষ্মীরা তাহার দ্বারা এই কাঁথাগুলি সেলাই করিতেন। ইহা বিক্রয় করিয়া তাহারা কায় কষ্টে জীবিকা চালাইতেন। কখনও কখনও স্নেহ, ভালবাসাই ইহার একমাত্র প্রেরণা দিয়াছে, স্বামী ও পুত্রকে দিবার জন্য রমনীরা দিনরাত পরিশ্রম করিয়া কাঁথা সেলাই করিতেন। সেই পুরাতন শাড়ী ও ছেড়া শাড়ীর পাড়ের নানা রঙের সুতা এবং সুচমাত্র ছিল ইহার উপাদান।”
ইহাতে একটি পয়সাও ব্যয় হইতো না, অথচ যে শিল্প কৌশল ও সহিষ্ণু পরিশ্রমে এক এক খানি কাঁথা তৈরি হইত, তাহা এদেশে ছাড়া অন্য কোন দেশে কোন রমনী কোন কালে এরূপ তুচ্ছ উপকরণ দিয়ে সম্পাদন করিয়াছেন বলিয়া আমার জানা নেই। (১) দীনেশ চন্দ্র সেন যা বলেছেন, তা মূলত বলেছেন হিন্দু রমনীগণের দ্বারা সেলাইকৃত কাঁথার উপর নির্ভর করে এবং এই সব কাঁথা মধ্যবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের রমনীগণ কৃত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের কাঁথা তার গবেষণার অন্তর্ভূক্ত ছিল বলে মনে হয় না। কারণ, এই অঞ্চলে কাঁথা সেলাইয়ের জন্যে পুরাতন শাড়ি ব্যবহৃত হতো না। হতো ‘কাপা’। কাপা বলতে বোঝায় দুই প্রস্থ কাপড়। এর এক প্রস্থ দ্বারা হয় পরাণ, কতকটা লুঙ্গির মতো করে এবং অপর প্রস্থ বক্ষে স্তনাবৃত করে বাধা হয়। কাপা হলো মোটা সুতা দিয়ে তৈরি কাপড়। নবাবগঞ্জ অঞ্চলের গ্রামের মেয়েরা এখনও অনেক কাপা পরে থাকেন। কাপার পাড় সাধারণত হয় লাল ৷ এই লাল পাড় এই অঞ্চলের কাঁথার একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ।
কাঁথার বা যে কনো ছুঁচের কাজের বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে, সেলাই কৌশল ও নকশা মুদ্রা বা মোটিফ (motiff) এর উপর। কাঁথার বিশেষত্ব অনুসারে তাকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করা চলে। নবাবগঞ্জ হলো এমনি একটা অঞ্চল ।
নবাবগঞ্জের কাঁথার নকশা মুদ্রা
নবাবগঞ্জেরে কাঁথায় যে সব নকশা তোলা হয়, তার অধিকাংশই হল জ্যামিতিক, প্রাকৃতিক নয়। জ্যামিতিক আকৃতির মধ্যে ত্রিভূজের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় “সেওরণ” (Cheuron), তা নবাবগঞ্জের কাঁথার নকশায় খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। একান্তর ভাবে দুই সারিতে ত্রিভূজ সাজালে এরকম নকশার উদ্ভব হয়। নবাবগঞ্জের লহরি কাঁথার মূল নকশা হলো ত্রিভূজ কেন্দ্রিক। ‘লহরি’ শব্দের মানে হলো ঢেউ। কিন্তু এই নকশার ঢেউ হল ত্রিভূজাকৃতির। খুব বেশি ধরনের রঙের সত্য লহরি কাঁথা সেলাইয়ে ব্যবহার করা হয় না। কাল, নীল, লাল, হলুদ, সবুজ ও সাদা সুতাই লহরি কাঁথা সেলাইয়ে অধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নকশা মুদ্রা (motiff) হিসেবে সেওরনের উদ্ভব হয়েছে, মাদুর ও ঝুড়ি বোনা থেকে । মাদুর ও ঝুড়ি বোনার ক্ষেত্রে এ ধরনের নকশা আপনা থেকেই উদ্ভব হতে চায়। জার্মান সমাজ বিজ্ঞানী Gottfried Semper-এর মতে, বিভিন্ন দেশের লোকশিল্পের মধ্যে অনেক মিল দেখা যায়। এই মিলের কারণ হলো, নির্মাণ উপকরণের ঐক্য।(২) একরকম নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করতে যেয়ে মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে এই রকমের নকশা মুদ্রার উদ্ভাবন করেছে ।
বয়ন শিল্পের সংগে শিকাশিল্পের যোগাযোগ কাছের। মানুষ কাপড় বুনবার আগে ঝুড়ি ও মাদুর বুনবার কৌশল আবিস্কার করেছে।(৩) বস্ত্রবয়নে সে ব্যবহার করেছে ঝুড়ি ও মাদুরের নকশা। পরে সূচিশিল্পেও সে একই নকশা মুদ্রার অনুকরণ করেছে। নবাবগঞ্জের লহরি কাঁথার নকশা একটা বহু আদিম ঐতিহ্যকেই বহন করে চলেছে। নবাবগঞ্জের কাথায় এক রকম চুতুষ্কোণ নকশা ব্যবহার করা হয়, যাকে বলা হয় চাটাই বা মাদুর নকশা। সমান মাপের চুতষ্কোণ হলো এই নকশার বৈশিষ্ট্য। আর এই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নকশার জন্য যে সেলাই কৌশল অবলম্বন করা হয়, তাকে বলে চাটাই বা পাটি ফোঁড়।
নবাবগঞ্জ অঞ্চলে কাঁথা সেলাই করবার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় “লিক ফোঁড়”। লিক বলতে বোঝায় ভেজা মাটির উপর গাড়ির চাকার দাগ। লিক ফোঁড় বলতে বোঝায় এমনভাবে সেলাই যার প্রত্যেক ফোঁড়ে মাপ মোটামুটি ভাবে হয় একই মাপের। দু’টি ফোঁড়ের মধ্যে করে দূরত্বও হয় ফোঁড়ের সমান। ফোঁড় দেওয়া হয় পাশাপাশি সমান্তরাল সরলরেখা অনুসরণ করে। দু’টি ফোঁড়ের মধ্যকার ব্যবধান থাকে প্রায় ফোঁড়ের দৈর্ঘ্যেরই সমান। কাঁথাকে উপর ও নিচ, দুই পিঠ থেকেই সেলাই করা হয়। এই সেলাই করবার সময় ফোঁড়গুলো নানাভাবে যোগ করে একাধিক প্রকার নকশা তোলা যায়। যেমন, লিক ঝুমকা, লিকফুল, লিকটান প্রভৃতি। কাঁথায় নকশা তোলার পর সাধারণত সাদা সুতা দিয়ে সেলাই করে নকশার চার পাশের ফাঁকা জায়গা ভরে তোলা হয়। সাদা সুতা দিয়ে ফোঁড় দেবার সময় ফোঁড়গুলোকে একই মাপের করা হয় না। ছোট বড় করে এবং আগে পিছে কার ফোঁড় দেওয়া হয়। এভাবে ফোঁড় দিয়ে সেলাই করবার ফলে কাপড় কুচকে ছোট ছোট ঢেউয়ের মত হয়। এর ফলে নকশা ভালভাবে ফুটে ওঠে এবং কাঁথা মজবুত হয়। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কাঁথায় এভাবে সাদা সুতা দিয়ে ফোঁড় দেওয়া হয়। কিন্তু নবাবগঞ্জ অঞ্চলে এই ফোঁড় দেওয়া হয় খুবই ঘন করে। এর ফলে নবাবগঞ্জ অঞ্চলের কাঁথা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের কাঁথার তুলনায় হাত দিয়ে নাড়লে অনেক শক্ত বলে মনে হয়। এই শক্ত ভাবও নবাবগঞ্জ কাঁথার একটা বৈশিষ্ট্য।.
সব দেশেরই তরুলতা সে দেশের নকশা কলায় প্রভাব ফেলে। নবাবগঞ্জ অঞ্চলের কাঁথার নকশাতেও পরিচিত উদ্ভিদের প্রভাব কিছু কিছু পরিলক্ষিত হয়। নবাগঞ্জ অঞ্চলে কাঁথায় পান পাতার মোটিফ খুবই প্রচলিত। অবশ্য নকশায় জ্যামিতিক আকার যত বেশি ব্যবহার করা হয়, উদ্ভিদীয় পরিকল্পনা ততটা ব্যবহার করা হয় না। এই অঞ্চলে কাঁথায় অন্যান্য অঞ্চলের কাঁথার মতো অশ্বস্থ পাতার নকশা থাকতে দেখা যায় না ।
নবাবগঞ্জ অঞ্চলের সুজনি কাঁথা খুব নাম করা। ‘সুজনি’ শব্দটা এসেছে ফারসি শব্দ ‘সোজনি’ শব্দ থেকে। ফারসিতে সোজন মানে হলো ছুঁচ। সোজনি বলতে বোঝায় ছুঁচি দিয়ে সেলাই করা নকশা তোলা বিছানা ও বালিশের আচ্ছাদন এবং বসবার আসন। মধ্য এশিয়ার বোখারার সোজনি খুব প্রসিদ্ধ। নবাবগঞ্জের সুজনিতে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে নকশা মুদ্রায়। কাঁথা সাধারণত সেলাই করা হয় পুরান কাপড় দিয়ে। কিন্তু সুজনিতে তা করা হয় না। সুজনি সেলাই করা হয় সস্তা কাপড় এবং লাল সালু একত্র করে সাদা দিয়ে। সাদা কাপড়ের উপর লাল সালু সেলাই করে সুজনির নকশার জমিন প্রস্তুত করা হয়। লাল সালুর উপর ওঠান হয় নকশা । সুজনির নকশায় বরফি খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। এমন কি ফুলের পাপড়ি, লতার পল্লবও করা হয় বরফির মতো করে। বরফি বলতে বোঝায় এমন জ্যামিতিক আকৃতি, যার চারটি বাহু পরস্পরের সমান। বিপরীত কোনগুলো একে অপরের সমান। বিপরীত কোনের দুটি স্থুল এবং দুটি সূক্ষ্ম । নবাবগঞ্জে তৈরি সুজনির বিশেষ বাণিজ্যিক চাহিদা আছে। অনেক সুজনি যথেষ্ট দামে বিক্রি হয়। তাই আগের তুলনায় সুজনি সেলাইয়ের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে ।
বাংলাদেশের কাঁথা নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটা ভাল বই লিখেছেন নিয়াজ জামান। যারা নবাবগঞ্জ অঞ্চলের কাঁথা ও সুজনি কাঁথা সম্বন্ধে বিশেষভাবে জানতে চান, বইটি তাদের জন্য হতে পারে একটি অবশ্য পাঠ্য।
সূচীকর্ম মানুষ বহুকাল ধরে করে আসছে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন সূচীকর্মের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে মিশরে। মানুষ প্রথম তিশির আঁশ দিয়ে কাপড় বুনতে আরম্ভ করে। আর তাতে সেলাই করে তুলতো নকশা। সবচেয়ে পুরান তিসি বস্ত্র বা লিনেন (Linen) মাটি খুড়ে পাওয়া গিয়েছে মিশরের ফাইউম (Fayem) নামক স্থানে। যার বয়স হলো প্রায় ছয় হাজার বছর। সুতার সাহায্যে প্রথম কোথাও প্রথম বস্ত্র বোনা আরম্ভ হয়। কার্পাস, তা এখনও যথাযথভাবে নির্মিত হতে পারেনি। তবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে পুরাতন কার্পাস বস্ত্র পাওয়া গিয়েছে (২৫০০ খ্রি. পূর্ব) মহেঞ্জোদারোর মাটি যা হলো তাম্র প্রস্তর যুগের। মানুষ প্রথমে হাড়ের তৈরি সুচের
খুঁড়ে ।
সাহায্যে সেলাই করা আরম্ভ করে। তার পরে ব্রোঞ্জের ও পরে লোহার সুচের সাহায্যে। তো কারো কারো মতে হরপ্পার মৃৎপাত্রের নকশা মুদ্রার প্রভাব বাংলার কাঁথায় দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু নবাবগঞ্জের কাঁথায় এরকম কোন নকশা মুদ্রার বর্তমান লেখকের নজরে পড়েনি। নবাবগঞ্জে কাঁথায় পাওয়া যায় নব্য যুগের প্রথম দিকের নকশা মুদ্রার (Ornamentalmoti)।
পরিচয়
ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে উত্তরবঙ্গে আরম্ভ হয় মধ্য এশিয়ার তুর্কী মুসলিম অভিযান। ইখতিয়ার উদ-দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি যখন বাংলার উত্তরাঞ্চল অধিকার করেন তখন এই অঞ্চলে বাস করতো মেচ খারু ও কোচজাতি। এরা সকলেই ছিল নব্য প্রস্তর যুগের ঐতিহ্যবাহী। মেচ জাতির একজন সর্দার ইখতিয়ার-উদ-দীন এর কাছ থেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং আলীমেচ নাম ধারণ করেন। আলীমেচ বিন বখতিয়ারের মৃত্যুর পর গৌড়ের অধিপতি হন। আসাম অঞ্চলে যে সব মেচ বাস করেন তাদের সংস্কৃতি হলো নব্যপ্রস্তর যুগের এবং এরা মঙ্গোলীয় মানবধারার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। উত্তরবঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে মঙ্গোলীয় লক্ষন বিদ্যমান। তাই এখানে তুর্কী ও নব্যপ্রস্তর যুগের মানব ধারার ঐতিহ্যের একটা সমন্বয় চোখে পড়ে। মীনহাজ-ই-সিরাজ লিখিত তবাকাৎ-ই-নাসিরী গ্রন্থ থেকে আমরা ইখতিয়ার উদ-দীন এর সময় কার অনেক তথ্য জানতে পারি।(৬)
গোটা ঊনবিংশ শতক ধরে সে সময়ের বাংলার চলছিল ওয়াহাবী আন্দোলন। এখন যে অঞ্চল নিয়ে নবাবগঞ্জ জেলা গঠিত, তখন তা ছিল মালদহ জেলার অংশ। মালদহের এই অংশে ওয়াহাবী আন্দোলন খুব তীব্র (১৮৬৩ খৃ.) আকার ধারণ করেছিল। (৭) এই অঞ্চলের মুসলমানরা হয়ে উঠেন খুব বেশি ইসলাম পন্থি। বাংলার অন্যান্য অঞ্চরে হিন্দুদের দেবীর মূর্তি চোখে পড়ে। চোখে পড়ে হিন্দু ধর্মের সংগে সংশ্লিষ্ট নানা প্রতীকের। কাঁথায় লক্ষ্য করা যায় লক্ষ্মীর আল্পনার প্রভাব। কিন্তু নবাবগঞ্জ এলাকার মুসলিম রমনীদের কাঁথায় এরকম নকশা মুদ্রার পরিচয় পাওয়া যায় না। বরং পাওয়া যায় ইসলামী নকশা ধারার পরিচয় ।
নবাবগঞ্জের আধুনিক কাঁথা
বর্তমানে নবাবগঞ্জ অঞ্চলের কাঁথায় বিলাতি ছুঁচের কাজ বেশ কিছুটা প্রাধান্য পেতে আরম্ভ করেছে। এখন নকশা তুলবার কাজে বিলাতি ধারায় ক্রস স্টিচ (cross stitch) ব্যবহার করা হচ্ছে। নবাবগঞ্জ অঞ্চলে এরকম ফোড়কে বলা হয় “তিন ফোঁড়”। অনেক নকশা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বিলাতি ইমব্রয়ডারী বই থেকে। আগে সুজনি সেলাই করবার জন্য ব্যবহার করা হতো ঘরে টাকুতে কাটা সুতা। কিন্তু এখন সুতা কেনা হয় বাজার থেকে। আগের চাইতে কাঁথার নকশায় এখন রঙের সংখ্যা বেড়েছে এসব রঙিন সুতাও কেনা হয় বাজার থেকে। গ্রামে শিক্ষা বিস্তারের সংগে সংগে বাড়ছে বিলাতি ছুঁচের কাজের প্রভাব। নবাবগঞ্জ অঞ্চলে শিক্ষার হার অন্যান্য অনেক অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। এখনকার সূচীকর্মে তাই আমরা যেমন পরিচয় পাই বহু প্রাচীন জ্যামিতিক নকশা ধারার, তেমনি আবার পাশাপাশি এখন লক্ষ্য করতে পারি, আধুনিক মননশিল্পেরও ধারা।
নির্দেশ পঞ্জিঃ
১। শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেন- বৃহৎ বঙ্গ। খৃ : ৪৩০। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩৪১ অব্দ।
2। Lyott Kriet Semper, quoted by Herbert Read, in the Meaning of Arat. Penguin Brors, 1931, p. 66.
3. E.B. Tylor, Anthropology, Vol. II Watt qco. London, 1944, pp. 15, 17.
4. Niaz Zaman. The Art of Kantha Embroidery. Bangladesh. Silpaxala Academy, Dhak, 1981.
5. Souia Cole, The Neobthic Rueohition, British Musiam, Natural History), 1961, pp. 43-45.
৬. দেব প্রসাদ ঘোষ হরপ্পা যুগের চারুকলা ও বাংলার লোকশিল্প। বেতার জগৎ। ৭ই অক্টোবর, ১৯৭২। পৃ. ৪৭-৪৯।
7. Minhaj-i-Siraj, Tabaqat-i-Nasiri. Tr. H.G. Raurty. (Bid, Ind. 1880)
8. C. E. Buck Land; Bengal Under, The Lieutenand Governnors, Vol. I, Calcutta, 1902, pp. 317-318
বাংলাদেশের কারুশিল্পী ও শিল্পকর্ম, জুন, ২০১৪