উদ্ভিদবিদ্যায় ঝোপ (Bush) বলতে বোঝায় এমন সব গাছকে, যাদের কাণ্ডের (Shoot) বেড় বেশি নয়। যাদের কাণ্ড থেকে শাখা-প্রশাখা নির্গত হয় প্রায় মাটির কাছাকাছি থেকে। যাদের সাধারণ উচ্চতা ২০ ফিটের বেশি হয় না। অন্য দিকে, বৃক্ষ (Tree) বলতে বোঝায়, এমন গাছকে, যাদের কাণ্ড বেশ মোটা এবং যাদের কাণ্ড থেকে শাখা-প্রশাখা নির্গত হয় মাটির বেশ কিছুটা উপর থেকে। এদের উচ্চতা হয় কম করে ২০ ফিট এবং তার উপরে। এ ছিল ব্রিটিশ আমলের হিসাব। যাকে বলা হয় বনভূমি, তাতে থাকে প্রধানত বৃক্ষ ও সেই সঙ্গে ঝোপজাতীয় গাছ। আমরা বৃক্ষ এবং ঝোপজাতীয় গাছকে একত্রে বোঝাচ্ছি বনবাদাড়। মানুষ বনবাদাড় কেটে আগুনে পুড়িয়ে পরিষ্কার করেছে জায়গা। সেখানে আবাদ করে লাগিয়েছে ফসল। গড়ে উঠেছে সভ্যতা। পুরাকালে বাংলাদেশের মানুষ সভ্য ছিল। কেননা তারা জমি চাষ করে ধান উৎপাদন করত। কাঠ কেটে নৌকা বানিয়ে, তাতে করে বাণিজ্য করতে যেত দূরে দূরে। অর্থাৎ তাদের অনেকের ছিল একটা সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক জীবন। আর এক কথায় সভ্যতা।
বাংলোদেশের অরণ্যকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয় : শাল অরণ্য, চট্টগ্রামের অরণ্য এবং জোয়ারের অরণ্য (দ্রষ্টব্য : ভারতের বনজ। সত্যেন্দ্রকুমার বসু, বিশ্ববিদ্যা সংগ্রহ, বিশ্বভারতী)। শালবনের মূল বৃক্ষ হলো শালগাছ (Shorea robusta)। শালগাছের পাতা শীতকালে ঝরে যায়। এরকম গাছকে বলে পত্রমোচি। আমাদের দেশে শালগাছ ৫০ থেকে ৭০ ফিটের মতো উঁচু হয়। কাণ্ডের বেড় হয় এক থেকে তিন ফিটের মতো। উদ্ভিদবিদ্যায় গাছের কাণ্ডের বেড় সাধারণত মাপা হয় মাটি থেকে চার ফুট নয় ইঞ্চি উঁচুতে অবস্থিত কাণ্ডের বেড়। শালগাছের কাঠ পুষ্ট হতে সময় লাগে প্রায় ২০ বছর। শালকাঠ খুব শক্ত। শালকাঠ ব্যবহৃত হয় নানা নির্মাণ কর্মে। তবে আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য নয়। প্রাচীনকালে শালকাঠ দিয়ে বাড়িঘর বানানো হতো। অশোকের রাজধানী পাটালিপুত্রে বাড়িঘর নির্মিত হয়েছিল শালকাঠ দিয়ে। কিন্তু এই রাজধানীর বাড়িঘর অগ্নিকাণ্ডের ফলে প্রায় সবই পুড়ে গিয়েছিল। এখনো পাটালিপুত্রে গেলে সে যুগের পোড়া শালকাঠ দেখতে পাওয়া যায় (আমি পাটালিপুত্রে গিয়ে এরকম পোড়া শালকাঠ দেখেছি)। সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে বর্তমান বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল অশোক সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। বগুড়ার মহাস্থানগড় নামক স্থানে চুনাপাথরের পিণ্ডের ওপর ব্রাহ্মলিপিতে লেখা অশোকের সময়ের একটি নির্দেশনামা পাওয়া গেছে, যা থেকে বোঝা যায় ওই অঞ্চল ছিল সম্রাট অশোকের নিয়ন্ত্রণে। শিলালিপিটির বয়স অনুমিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দ। এর চেয়ে পুরাতন কোনো শিলালিপি বর্তমান বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। শালগাছ থেকে একরকম রজন পাওয়া যায়। যাকে বলে ধুনা। হিন্দুরা পূজায় ধুনা জ্বালান সুগন্ধি ধোঁয়া পাওয়ার জন্য। মনে করা হয় একসময় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গাতেই ছিল শালবন। মানুষ যা কেটে পুড়িয়ে পরিষ্কার করে গড়েছে ক্ষেতখামার।
অনুমান করা হয়, বর্তমান বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রথম আরম্ভ হয়েছিল জনপদ গঠন। বাংলাদেশে এখন শালবন বলতে বোঝায় মধুপুরগড় অঞ্চলের বনকে, যা আরম্ভ হয়েছে ঢাকার কাছে সাভার থেকে। তবে শালগাছের এই বন আগের মতো অতটা আর ঘন নয়। আর শালবনের মধ্যে গড়ে উঠেছে জনপদ। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৫ সালে এখন যেখানে হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে ধরা পড়েছে বুনোহাতি (Elephas maximus)। ঢাকার যেখানটাকে বলা হয় পিলখানা, সেখানে বুনোহাতি এনে পোষ মানানো হতো। পোষ মানানোর পর বিক্রি করা হতো হাতিদের। ফারসি ভাষায় পিল মানে হাতি। এ থেকেই এসেছে পিলখানা নামটি। মধুপুরগড় অঞ্চলের বনে যথেষ্ট মধু ও মোম পাওয়া যেত। লোকে এই মোম ও মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু এখন আর সেটা হয় না। ঢাকা এখন সারা বাংলাদেশের রাজধানী। মধুপুরগড় অঞ্চলের শালবন আর নেই আগের মতো।
চট্টগ্রামের অরণ্য বলতে বোঝায় মিশ্র বনভূমিকে। তবে এই বনের বৈশিষ্ট্যময় গাছ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, তেলি গর্জন গাছকে (Dipterocarpus turbinatus)। এই গাছের উচ্চতা কম করে ২০০ ফুট হতে দেখা যায়। কাণ্ডের বেড় হয় ১২ ফুটের মতো। তবে এর কাঠ ভালো নয়। এই গাছ থেকে একরকম তেল পাওয়া যায়, যাকে একসময় বার্নিশের কাজে খুব বেশি ব্যবহার করা হতো। গর্জন প্রকাণ্ড চিরহরিৎ বৃক্ষ। চট্টগ্রামের অরণ্যে আরো বহু রকম গাছ হয়। জারুল (Lagerstroemia flosreginae) গাছের কাঠ খুব ভালো। এর সাহায্যে আসবাবপত্র বানানো চলে। গাছটির বেড় ১২ থেকে ১৪ ফুটের মতো হয়। আগেকার দিনে গাছটি কেটে তার কাণ্ডের মধ্যে আগুন ধরিয়ে খানিক অংশ পুড়িয়ে ফেলে ডোঙা বানানো হতো। চাপালিশ (Artocarpus chaplasha) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বনের আর একটি প্রকাণ্ড গাছ। যার উচ্চতা হয় ১৫০ ফুট এবং কাণ্ডের বেড় হয় ১৫ ফুটের মতো। এর কাঠ শক্ত এবং টেকসই। এই কাঠ দিয়ে খুব ভালো আসবাবপত্র নির্মাণ করা চলে। সুরুজবেদ (Cedrela toona) আরেকটি বড় গাছ। এর কাঠও খুব ভালো। চকচকে পালিশ হয়। সহজে পোকা লাগে না।
খোদাইয়ের কাজ করা চলে। আমচন্দুল (Swintonia floribundaq) গাছের কাঠ দিয়ে ভিনিয়ারস (Veneers) ও প্লাইউড (Plywood) বানানো যায়। ভিনিয়াস বলতে বোঝায়, কাঠের পাতলা পাতলা চওড়া ফালি। সাধারণত লেদ মেশিনে কাঠের টুকরোকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ধারালো ফলার সাহায্যে এ ধরনের পাতলা ফালি প্রস্তুত করা হয়। কাঠকে সাধারণত কাটা হয় কাঁচা অবস্থায়। প্লাইউড বলতে বোঝায়, ভিনিয়ারসদের একত্র করে পাতলা কাঠের তক্তা তৈরিকে, যা দিয়ে বাক্স বানানো চলে। এ ছাড়া আমচন্দুলের কাঠ দিয়ে কাগজও বানানো যায়। চট্টগ্রামের অরণ্যে অনেক জিয়ল গাছ (Odina wodier) হয়। এই গাছের আঠা অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। নাগকেশর (Mesua ferrea) গাছ দেখতে খুব ভালো। তাই এই গাছটিকে এখন অন্যত্র পথের ধারেও রোপণ করা হয়, পথের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। এর কাঠ সাঁকো বানাবার কাজেও ব্যবহার করা চলে। ব্যবহার করা চলে অস্ত্রের হাতল বানাবার জন্য। চট্টগ্রামের অরণ্যের বিভিন্ন গাছের ফাঁকে ফাঁকে মূলি বাঁশ (Melocanna bambusoides) হতে দেখা যায়। সাধারণ বাঁশের মতো এর কোনো ঝাড় হয় না। প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা বাঁশ মাটির তলার শিকড় থেকে উৎপন্ন হয়। এই বাঁশ খুব সোজা। বাঁশের উচ্চতা ৬০ থেকে ৭০ ফুট হতে পারে। আর বেড় হতে পারে ৯ থেকে ১০ ইঞ্চি। চট্টগ্রামের পার্বত্য উপজাতিরা এই বাঁশ দিয়ে ঘর বানায়। চৌকি বানায়, পানির পাত্র বানায়, থালা বানায়। এই বাঁশের সাহায্যে তারা তাদের অনেক প্রয়োজন পূরণ করে। এই বাঁশ থেকে উৎকৃষ্ট কাগজ প্রস্তুত করা সম্ভব। ১৮৭১ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইতে সেগুন গাছ (Tectona grandis) রোপণ করা শুরু হয়। চট্টগ্রামের সেগুন কাঠ মিয়ানমারের সেগুন কাঠের মতো না হলেও যথেষ্ট মূলবান। কাঠের মধ্যে সেগুন কাঠকেই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কাঠ হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ অর্থকরী দিক থেকে চট্টগ্রামের অরণ্য যথেষ্ট মূল্যবান।
জোয়ারের অরণ্য বলতে প্রধানত বোঝায় সুন্দরবনকে। এই অরণ্যে প্রচুর কাদা। কেননা, জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি এসে জমা হয় বনের মধ্যে। আবার নেমে যায় ভাটার সময়। সাধারণ গাছ এ অবস্থায় বাঁচে না। যেসব গাছ খুব লবণ সহ্য করতে পারে, সুন্দরবন অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানজুড়ে তাদের হতে দেখা যায়। এ ধরনের গাছকে বলা হয় হ্যালোফাইট বা লবণপ্রিয় গাছ। সুন্দরবনের নদীর ধারে কেওড়া নামে (Sonneratia aptala) গাছ হয়। এই গাছটি সুন্দরবনের আর সব গাছের চেয়ে হয় উঁচু। সুন্দরবনের অন্যসব গাছ আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। উদ্ভিদবিদ্যাবিদ ডেভিড প্রেন (David Prain) ১৯০৩ সালে Bengal Plants নামে দুই খণ্ডে একটি বই লেখেন। এই বইটি এখনো বাংলাদেশের গাছপালা সম্বন্ধে জানতে যথেষ্ট সাহায্য করে। ডেভিড প্রেনের মতে, সুন্দরবনের নাম হয়েছে সুঁদরী (Heritiera minor) গাছের নাম থেকে। তবে সবাই তার এই মতকে স্বীকার করেন না। কারণ, সুঁদরী গাছ কেবলমাত্র বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে হতে দেখা যায়। কিন্তু ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলে হতে দেখা যায় না। সুঁদরী গাছ চল্লিশ থেকে ষাট ফুটের মতো উঁচু হতে পারে। গাছের বেড় হতে পারে তিন থেকে চার ফুটের মতো। সুঁদরী গাছ থেকে প্রচুর জ্বালানি কাঠ পাওয়া যেত, যা একসময় কলকাতা শহরে খড়ির প্রয়োজন মেটাত। এর কাঠ থেকে খুব ভালো কাঠ-কয়লা প্রস্তুত করা যায়, যাকে বারুদ তৈরির কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সুন্দরবনে বহু সুঁদরী গাছ মাটিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে মারা যাচ্ছে বলে পত্রিকার খবের প্রকাশ। লবণাক্ততা বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ফারাক্কা ব্যারাজ করার ফলে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়া ও মন্থর হওয়া। ফলে জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানিতে যে লবণ আসে তা আগের মতো আর ধুয়ে যেতে না পারা। তবে সুঁদরী গাছ অন্য কারণেও মরে যেতে পারে।
যাই হোক, এ ব্যাপারে কেউ যথেষ্ট গবেষণা করেননি। সুন্দরবনের প্রধান গাছ হলো গরান (Ceriops roxbughiana)। গরান হলো বড় আকারের ঝোপজাতীয় গাছ। এই গাছ থেকে যথেষ্ট ট্যানিন পাওয়া যায়, যা চামড়া ট্যান করতে লাগে। সুন্দরবনের একটি অর্থকরী উদ্ভিদ হলো গেওয়া (Excoecaria agallocha)। এই গাছের কাঠ থেকে নিউজপ্রিন্ট তৈরি করা যায়। পাকিস্তান আমলে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে নিউজপ্রিন্ট তৈরি করা হচ্ছিল। এখন যা বন্ধ হয়ে আছে। পাকিস্তান আমলে গরান গাছ থেকে ট্যানিন নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সুন্দরবনে নদীর কিনারে পানির মধ্যে নারকেল গাছের মতো একরকম গাছ হয়। যাকে বলে গোলপাতার (Nipa fruticans) গাছ। গাছটির কাণ্ড মূলাকার, যা পানির মধ্যে থাকে। গাছটির যৌগিকপত্র প্রায় ১৫ থেকে ৩০ ফুটের মতো লম্বা হতে পারে। গোলপাতা গাছের পত্রাক দিয়ে ঘর ছাওয়া হয়। ঠোঙা বানাবার কাজে ব্যবহার করা হয়। গোলপাতার ফল খেতে কতকটা তাল-শাঁসের মতো। গোলাপাতা গাছের রস থেকে গুড় বানানো চলে। সুন্দরবনে খেজুরগাছের মতো একরকম গাছ হয়। যার নাম হিন্তাল (Phoenix paludosa)। হিন্তাল গাছের পাতা দিয়ে মাদুর বোনা হয়। কিন্তু এর কাণ্ড খেজুরগাছের কাণ্ডের মতো মোটা হয় না। হিন্তাল গাছের কাণ্ড দিয়ে লাঠি বানানো হয়। যার সাহায্যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা চলাফেরা করেন। সুন্দরবনের মধু ও মোম বিখ্যাত। বহু লোক এপ্রিল ও মে মাসে সুন্দরবনে মধু ও মোম সংগ্রহ করতে যান। মধু ও মোম সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতি বছর ৫-১০ জন ব্যক্তি এখনো সুন্দরবনের বাঘের (Panthera tigris) দ্বারা আক্রান্ত ও ভক্ষিত হন।
আমি বাংলাদেশের বন নিয়ে এসব কথা আলোচনা করছি কারণ, ২১ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক বন দিবস। এই দিবসে বাংলাদেশের বন নিয়ে যত না আলোচনা করা হলো, তার চেয়ে বেশি আলোচনা করা হলো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা নিয়ে। পত্রিকার খবর পড়ে (প্রথম আলো, ২১ মার্চ ২০১৭) জানলাম, রামগড়-সীতাকুণ্ড সংরক্ষিত বনভূমির ওপর দিয়ে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ৬৩ একর বনভূমির বৃক্ষ কাটা পড়বে। একজন বিশেষজ্ঞ দুঃখ করেছেন, ওই অঞ্চলের বনভূমি এর ফলে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। বন্যপ্রাণীরা সহজে বনের এক অংশ থেকে আরেক অংশে যেতে পারবে না। বন্যপ্রাণীদের অসুবিধার কথা ভেবে বিশেষজ্ঞরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের এই অসুবিধা কি একটি বিশেষ বিবেচ্য বিষয় হতে পারে? সুন্দরবন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। দেশকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে নিতে হলে দক্ষিণ বঙ্গে আরো একাধিক সমুদ্রবন্দর গড়তে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের। অনেক বিশেষজ্ঞ দুঃখ করছেন এর ফলে সুন্দরবনের প্রাণীদের ক্ষতি হবে বিধায়। কিন্তু দেশের শিল্পবিপ্লব ঘটাতে হলে এরকম বন্দর না গড়ে উপায় নেই। আমরা বন্যজন্তুর ক্ষতি হবে ভেবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারি না।
ইকোলজি (Ecology) শব্দটার উদ্ভব হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘আইকোজ’ থেকে। আইকোজ শব্দের অর্থ হলো বাড়ি বা বাসস্থান। ইকোলজি শব্দটার বাংলা করা হয়েছে বাস্তুবিদ্যা। ইকোলজি শব্দটা জীববিজ্ঞানে প্রথম ব্যবহার করেন বিখ্যাত জার্মান জীবতাত্ত্বিক আর্নেস্ট হেকেল (Earnest Haeckel) ১৮৬৬ সালে। তিনি প্রাণী ও উদ্ভিদের ওপর তাদের পরিবেশের প্রভাব নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে শব্দটি চয়ন করেন। ১৯৩০ এর দশকে ইকোলজি জীববিজ্ঞানের একটি প্রধান শাখায় পরিণত হয়। এরপর থেকে ইকোলজি নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। অ্যাপলাইড ইকোলজি বা ফলিত বাস্তুবিদ্যা বলতে এখন বোঝাচ্ছে, পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুশীলন ও আলোচনাকে। দূষণ শব্দটা ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপক অর্থে। দূষণ বলতে বোঝাচ্ছে, যা কিছু করলে প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষতি হতে পারে, তার সব কিছুকে। কেবলই প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্যের সৃষ্টি হওয়াকে নয়। অনেকে পরিবেশ দূষণের নামে করছেন কলকারখানার অর্থনীতির বিরোধিতা। এদের এই বিরোধিতাকে মেনে নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে তোলা আদৌ সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। সুন্দরবন রক্ষার নামে যথেষ্ট হইচই হচ্ছে। সুন্দরবন রক্ষাকে মনে করা হচ্ছে শিল্পবিপ্লবের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৪ মার্চ ২০১৭।