একজন সব্যসাচী চিন্তক ও বিশ্লেষক এবনে গোলাম সামাদ। তাঁর চিন্তার পরিধি ছুঁয়ে গেছে অনেক কিছু। যার অধিকাংশই চলমান। একটু এগিয়ে বললে কথাটা এমনই দাঁড়ায়, তিনি সমকালীন বাংলাদেশের একজন বিদগ্ধ মননশীলতার প্রতিমূর্তি। নব্বইয়ের চৌকাঠে বসেও একজন তারুণ্যদ্বীপ্ত পুরুষ। তাইতো চলমান বিশ্বের প্রতিটি বিষয় ছুঁয়ে গেছে তাঁর চিন্তাকে। তিনি একাধিক বই লিখেছেন জীবাণুতত্তে¡র ওপর। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও তিনি বই লিখেছেন শিল্পকলার ওপর। এখনো ‘শিল্পকলার ইতিকথা’, ‘মানুষ ও তার শিল্পকলা’ এবং ‘ইসলামী শিল্পকলা’ গ্রন্থত্রয় সারা দেশে যথেষ্ট আদ্রিত। উল্লেখ্য যে, ‘শিল্পকলার ইতিকথা’ বাংলাদেশে শিল্পকলার ওপর প্রথম বই এবং ‘ইসলামী শিল্পকলা’ গ্রন্থটিও ইসলামী শিল্পকলার ওপর লেখা বাংলাভাষায় প্রথম বই। নৃতত্ত¡ তাঁর প্রিয় বিষয়। নৃতত্তে¡র ওপর লেখা একাধিক গ্রন্থই তার প্রমাণ। এছাড়া তিনি লিখেছেন সাহিত্য সংস্কৃতি, সমাজতত্ত¡, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মতত্ত¡ সহ বিবিধ বিষয়ে বই ও অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ। এবনে গোলাম সামাদ আজ বাংলাদেশের চিন্তক মহলে একটি বিশেষ অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল এবনে গোলাম সামাদকে দেওয়া এক বিশেষ সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে থাকবার। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশ বিদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পী সহ অনেকে। সেখানে পঠিত মূল প্রবন্ধে এবনে গোলাম সামাদকে বলা হয়েছিল- ‘ সমাজ সচেতন, সক্রিয় নাগরিকত্বের প্রতীক পুরুষ।’ সেই প্রবন্ধে আরো বলা হল- ‘জাতির প্রতিটি সঙ্কট সন্ধিক্ষণে তিনি প্রবীণ বয়সে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে সুচিন্তিত দিক নির্দেশনা দিয়ে নিরলসভাবে কলমযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এই বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই আমাদের অনেকের জন্য প্রেরণার উৎস।’ এখানে কথাগুলো টানছি এই কারণে যে, কথাগুলো নতুন করে ভাববার সুযোগ এসেছে। আর আমার কাছে তা মিলিয়ে নেবার সুযোগ হল- ‘বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি’ শিরোনামের গ্রন্থটি পড়ে। এটি এবনে গালাম সামাদের এ পর্যন্ত শেষ বই। বাংলাদেশের আদিবাসী নিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি একটি আকর গ্রন্থও বটে।
বাংলাদেশের আদিবাসী, উপজাতি কিংবা ক্ষুদ্র নৃজাতি নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরনো। অনেক ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িও। আমরা এও জানি, এটা যতটা না ঐতিহাসিক, তার অধিক রাজনৈতিক। এই স্বর্থান্বেষী মহলের তালিকায় শুধু রাজনীতিকই নেই, আছেন নামি দামি বুদ্ধিজীবীও। তবে ‘বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি’ গ্রন্থটি এ নিয়ে অনেক যুক্তিতর্কেরই অবসান ঘটাতে পারবে। কারণ, এখানকার যুক্তিতর্ক এতটাই তথ্য নির্ভর যে, এর আদিবাসী সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা সর্বাগ্রে। ভৌগলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, নৃতাত্তি¡ক, ভাষিক, সংস্কৃতিক এমন কি রাজনৈতিক বিচার বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশ নামক ভুখÐের প্রকৃত আদিবাসী কারা। গ্রন্থটি অবয়বে ঢাউস না হলেও এর বিশেষ মূল্য রয়েছে বোদ্ধা পাঠক মহলে।
‘বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি’ গ্রন্থটির প্রবন্ধগুলোকে গুরুত্বের দিক থেকে আলাদা করে দেখবার সুযোগ নেই। তার পরেও কয়েকটিকে মোটাদাগে চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেমন- ইতিহাসের প্রেক্ষিতে তিন পার্বত্য জেলা, উপজাতি সমস্যা জটিল করা হচ্ছে, পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, ইতিহাসের পটে আরাকান-বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা মুসলিম সমস্যা, উপজাতি নিয়ে রাজনীতি, উপজাতি সংস্কৃতি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে, বাংলাদেশে বৌদ্ধ মুসিলিম সম্পর্ক, চাকমা রাজনীতিতে হিন্দুত্ব এবং বাংলাদেশে বাংলাভাষী মানুষই আদিবাসী। প্রবন্ধগুলোতে এবনে গোলাম সামাদ তাঁর আদিবাসী চিন্তার বিশ্লেষণ যথেষ্ট চুলচেরা। তিনি নৃতাত্তি¡ক, ভাষাতাত্তি¡ক, ভৌগলিক সহ অন্যান্য বিশ্লেষণ এতটাই নির্ভরযোগ্য ভাবে করেছেন যে, বর্ণচোরা বুদ্ধিজীবীদের মুখোশ অনেকটা আলগা হয়েছে আদিবাসী প্রসঙ্গে। আমাদের দেশের এক শ্রেণির কথিত পÐিতবর্গ নিজেকে নিয়োগ করেছেন উপজাতি (তাদের কথায় আদিবাসী) সংস্কৃতি সংরক্ষণের কাজে। উপজাতি সংস্কৃতিকে করতে চাচ্ছেন বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ঐতিহ্য হিসাবে। আর তাই তাদের করতে হবে আমাদের নিজের জন্যই সংরক্ষণ। এবনে গোলাম সামাদ তাদের কড়া সমালোচনা করেছেন। উপজাতি সংস্কৃতি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য কতকটা এমন, কোনকিছু জোর করে সংরক্ষণ করা যায় না, যদি তার যোগ্যতা না থাকে সংরক্ষিত হবার। বৃহৎ পরিসর কোন সংক্ষিপ্তকে তার বা তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই গ্রহণ করবে সেই সংক্ষিপ্তের বিলীনতা থেকে। যেমন টিকে আছে ঝুমুর তাল, টিকে আছে ভাওয়াইয়া গান কিংবা মণিপুরী নৃত্য। এদেরকে কেউ জোর করে টিকিয়ে রাখেনি। তারা বৃহৎ সমাজের সংস্কৃতির অংশ হয়েছে নিজের যোগ্যতায়। আসলে আমরা যেন উপজাতি সংস্কৃতি সংরক্ষণের ব্যাপারে বিলুপ্তি আর মিশে যাওয়াকে সমার্থক করে তুলতে চাচ্ছি। এবনে গোলাম সামাদ উপজাতি সংস্কৃতি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বুশম্যান ও হটেনটট জাতির কথা। তিনি আরো অবতারণা করেছেন হুদুমা নৃত্যের কথা। বাংলার উত্তরাঞ্চলে এক সময় কিছু উপজাতি বাস করত। তারা বহন করে চলেছিল অনেক আদিম ঐতিহ্য। এই উপজাতিদের মধ্যে এক বিশিষ্ট উপজাতি হল রাজবংশী। রাজবংশীরা অনেকদিন বৃষ্টি না হলে করত ‘হুদুমা’ পূজা। হুদুমা হল এ সম্প্রদায়ের কাছে বৃষ্টির দেবতা। এই হুদুমা পূজার সময় যুবতী মেয়েরা নগ্ন হয়ে বিশেষ যৌনাবেগে নাচত। আর শিশ্নের প্রতীক হিসাবে খেত কদলী। প্রতীকী হুদুমা রূপী কলাগাছকে নগ্ন মেয়েরা বারবার জড়িয়ে ধরত বিশেষ ভঙ্গিতে। এখানে লেখকের বক্তব্য, ‘আজ যদি কেউ বলেন বৃষ্টি আনবার জন্য হুদুমা নাচ নাচতে হবে, তবে সেটা পেতে পারে না আমাদের সাধারণ সমর্থন। উপজাতি সংস্কৃতি সংরক্ষণের সময় এসব কথা মনে রাখা হলো যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক।’(উপজাতি সংস্কৃতি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে)
বাংলাদেশে উপজাতি নিয়ে রাজনীতির মূল পুঁজি এখন যেন সাঁওতালকে টপকে হয়েছে চাকমা। তাদের দিয়েই বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করবার চেষ্টা চলেছে তিন পার্বত্য জেলাকে। এ প্রক্রিয়াকে বেগবান করছে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র। চাকমাদের তারা প্রচার করছে শক্তিমান জাতি হিসাবে। এবনে গোলাম সামাদ চাকমা জাতি ও চাকমা শব্দের উৎপত্তি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন এখানে। তিনি তাঁর মতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সতীশচন্দ্র ঘোষ ও বৃটিশ নৃতাত্তি¡ক হার্বাট রিজলের বিশ্লেষণ ও গবেষণা সহ অনেক উপকরণ এনে। আলোচ্য গ্রন্থে শুধু বাংলাদেশের আদিবাসী, জাতি উপজাতির স্বরূপই বিশ্লেষণ করা হয়নি; আছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। লেখক তাঁর স্বতন্ত্র বিশ্লেষণে পরিষ্কার করেছেন যে, উপজাতি নিয়ে যেভাবে রাজনীতি করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে যদি আমরা সচেতন না হই তবে আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব নিয়ে দেখা দিতে পারে বড় রকমের বিপর্যয়। তিনি এক প্রবন্ধে বলেছেন- ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির পক্ষ থেকে ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠী’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে(২০০৭)। এতে বলা হয়েছে ‘আদিবাসী’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে। ‘আদি’ অর্থ হলো ‘মূল’ এবং ‘বাসী’ অর্থ ‘অধিবাসী’। সুতরাং আদিবাসী কথাটির অর্থ ধরা যায় দেশীয় লোক (ওহফরমবহড়ঁং ঢ়বড়ঢ়ষব)। সঙ্গত কারণে তাই প্রশ্ন উঠছে আমরা অর্থাৎ বাংলাভাষী মুসলমান কি এদেশে বিবেচিত হবো বহিরাগত হিসাবে? এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে এক ধরণের রাজনীতির প্রভাব। সেটাকে আমরা কোনভাবেই সমর্থন দিতে পারি না। কারণ সেটা হবে আমাদের জন্য আত্মঘাতি। আমরা নিজভ‚মে হয়ে উঠবো পরবাসী। থাকবে না আমাদের নিজের বলে কোন দেশ।’(উপজাতি নিয়ে রাজনীতি)
এবনে গোলাম সামাদ এই গ্রন্থে স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন, বাঙালি আর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে। তিনি স্পষ্ট করেছেন, বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভ‚খÐে আমরা সবাই বাংলাদেশী নাকি বাঙালি। শুধু ভাষাভিত্তিকভাবে গড়ে উঠেনি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। ভাষা, ধর্ম, ভ‚খÐ সব মিলেই গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আবশ্যিকতা। এ ব্যাপারে লেখকের সহজভাষ্য এরকম- ‘১৯৭১ সালে তখনকার বিশেষ পরিস্থিতিতে সাকেব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীক কাঠামোর মধ্যে সৃষ্টি হতে পেরেছিল বাংলাভাষা ভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ। কিন্তু নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে এখন বাংলাদেশে রূপ নিচ্ছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণা। বাংলাভাষা এই জাতীয়তাবাদের একটি প্রধান উপাদান হলেও একমাত্র উপাদান নয়। এর কারণ, বাংলা যাদের মাতৃভাষা, তাদের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ বাস করে বাংলাদেশে আর শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ বাস করে ভারতে। সব বাংলাভাষী মানুষ এক রাষ্ট্রের পতাকাতলে আসেনি; আসবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ভারতের বাংলাভাষী মানুষ থাকতে চাচ্ছে ভারতীয় মহাজাতির অংশ হয়ে। কেবলমাত্র বাংলাদেশের বাংলাভাষী মানুষই চাচ্ছে নিজেদের পৃথক স্বাধীন অস্তিত্বকে বজায় রাখতে, যে ইচ্ছা হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’ (উপজাতি প্রসঙ্গে আরো কথা)
‘বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি’ গ্রন্থের একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ হল ‘বাংলাদেশে বাংলাভাষী মানুষই আদিবাসী’। এই প্রবন্ধের চিন্তায় রয়েছে গবেষণার খোরাক। এখানে নির্ভরযোগ্য তত্ত¡, তথ্য উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের কথিত আদিবাসীরা এই ভূখন্ডে খুব বেশিদিন আগে আসেননি। এই ভ‚খন্ডের প্রকৃত আদিবাসী হলেন বাংলাভাষী মানুষ। এখন যা অনেক গবেষকেরই আমলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রন্থটিকে আরো ওজোগুন সম্পন্ন করেছে এর ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’ শিরোনামের লেখা। এখানে লেখক সংক্ষিপ্ত কলেবরে অবতারণা করেছেন বিভিন্ন বিষয়। এগুলো পাঠান্তে পাঠক কিংবা গবেষককে নতুন করে ভাবিত করবে; আর বেগবান করবে বিষয়টি নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে। বিবিধ প্রসঙ্গের উপ-শিরোনামগুলো হল- আর্য ও অনার্য; বর্ণাশ্রম; বাঙালির উৎপত্তি; অস্ট্রিক জাতি; জাতি গঠনে ধর্ম; আমাদের ইতিহাসের আদিপর্ব। পরিশিষ্ট অংশে লেখক অবতারণা করেছেন তাঁর আত্মদর্শন।
‘বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি’ গ্রন্থটি অবয়বে ছোট হলেও এর ওজোমূল্য অনেক ওপরে। বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক প্ররিস্থিতিতে এর গুরুত্ব আরো অধিক। তাই আমাদের জাতীয় স্বার্থেই গ্রন্থটি অধিক পঠিত হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। সঙ্গত কারণেই এর প্রচার ও প্রসার আবশ্যক।
এবনে গোলাম সামাদের শৈশব-কৈশোর কেটেছে পটুয়া হবার স্বপ্ন নিয়ে। ইচ্ছা ছিল বড় শিল্পী হবেন। রং-তুলিও হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। তবে শিল্পকলার প্রতি আকর্ষণ থেকে গেছে আজীবন। তাঁর লেখালেখির শুরু শিল্পকলার আলোচনা-সমালোচনা দিয়ে। ক্যানভাসে নিজেকে বিকশিত করতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু শিল্পকলার ইতিহাস চর্চার মধ্যে কাটিয়েছেন জীবনের অনেকখানি সময়। শিল্পকলার ওপর তাঁর রচিত একধিক গ্রন্থ এর প্রমাণ। জীবাণুতত্তে¡র শিক্ষক প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদ এক সময় ঝুঁকে পড়েন নৃ-তত্তে¡র দিকে। তাঁর এই আগ্রহকে আরও উসকে দেয় পাঁরি’র নৃ-তত্ত¡ জাদুঘর। সেই জাদুঘরে অনেক সময় কাটিয়েছেন তিনি। নৃ-তত্ত্বের ওপর তিনি লিখেছেন আকর গ্রন্থ।
জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা শাখায় গভীর আকর্ষণে এখনো উবু হয়ে আছেন এবনে গোলাম সামাদ। শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে গভীর অধ্যায়ন করেছেন এবং এসব বিষয়ে লিখেছেন ও লিখছেন বহু প্রবন্ধ ও কলাম। তাঁকে জীবন্ত জ্ঞানকোষ হিসেবে বিবেচনা করা হলে অত্যুক্তি হবে না। তাঁর সর্বব্যাপক অধ্যায়ন, জ্ঞানের গভীরতা এবং সহজ ও বোধগম্যভাবে তা উপস্থাপনের ঈর্ষণীয় ক্ষমতা বিস্মিত করে আমাদের।
মফস্বল শহরে জীবন কাটিয়েও এবনে গোলাম সামাদ সারা বিশ্বের চলমান বাস্তবতাকে রেখেছেন তাঁর জ্ঞান ও চর্চার আয়ত্তের মধ্যে। আর প্রচার প্রচারণাকে সারা জীবন এড়িয়ে চলেছেন সযতেœ। তবে নিজেকে কখনো গণবিচ্ছিন্ন করে রাখেননি। ফলে তাঁর চিন্তাচর্চার সঙ্গে দেশ ও দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি কখনো। দেশের যে কোন সঙ্কটে তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণ ও চিন্তার ফসলকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন সরাসরি ও নির্ভীকভাবে। ৮৫ তম জন্মদিনে কলামিস্ট জ্ঞান তাপস এবনে গোলাম সামাদের জন্যে আমাদের অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাস। আমাদের কামনা, আল্লাহ তাঁকে আরো দীর্ঘদিন সজীব ও উজ্জ্বল রাখুন আমাদের তথা বাংলাদেশের পাশে।
(লিখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ড. এবনে গোলাম সামাদের ৮৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে দৈনিক নয়া দিগন্তে)