বিশ্বের কোনো দেশেরই ভবিষ্যৎ এখন আর কেবল তার নিজের দেশের ঘটনাবলির প্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। বিদেশের ঘটনাবলির প্রভাব এসে পড়ে তার ওপর। যুদ্ধ ভালো নয়। কিন্তু তবু এখনো যুদ্ধ হচ্ছে পৃথিবীর নানা দেশে নানা অঞ্চলে। এক দেশ আর এক দেশের সাথে জড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধে। যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য গঠিত হয়েছিল জাতিসঙ্ঘ ১৯৪৫ সালে। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘকে অগ্রাহ্য করেই আক্রমণ করল ইরাককে। আর ইরাকে এখনো প্রতিদিন হচ্ছে লোকক্ষয়। যুদ্ধ চলেছে আফগানিস্তানে। যুদ্ধের হুমকি দেয়া হচ্ছে ইরানকে। সব মিলিয়ে বিশ্বপরিস্থিতি হচ্ছে জটিল থেকে জটিলতর। আমরা একটা নিরাপদ বিশ্বে বাস করছি না। ধনী-দরিদ্র সব দেশেই সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়ে চলেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেবল তার ঘরোয়া রাজনীতি দ্বারা নিরূপিত হবে না। নিরূপিত হবে বিশ্বপরিস্থিতির ওপর, আর এই বিশ্বপরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে গৃহীত হতে হবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। মনে হচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি বিশ্লেষণে থাকছে আমাদের চিন্তায় যথেষ্ট ঘাটতি। আমরা বিশ্বপরিস্থিতির অনেকগুলো দিককে যেন নিতে চাচ্ছি না আমাদের বিবেচনায়। আমরা অনেক সমস্যাকে করে ফেলতে চাচ্ছি খুবই সরল। যা হয়ে উঠতে পারে আমাদের জন্য বিপজ্জনক।
সম্প্রতি লন্ডনে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ভারত আর বাংলাদেশের ভাগ্য নাকি এক সূত্রেই গাঁথা। আর তাই তার পররাষ্ট্রনীতিও হতে হবে অভিন্ন। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন হয়ে উঠেছে খুবই ঘনিষ্ঠ। যেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ১৯৭১ সালে। কিন্তু ১৯৭১ সালে কলকাতায় অবস্থিত তাজউদ্দীন সরকারের কোনো স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি ছিল না। তাকে অনুসরণ করে চলতে হচ্ছিল ভারত সরকারের নির্দেশ। তাই প্রশ্ন উঠছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অবস্থা কি দাঁড়িয়েছে ১৯৭১ সালের তাজউদ্দীন সরকারেরই মতো। বাংলাদেশ সরকার না ভারত সরকার, প্রকৃত প্রস্তাবে কে নিয়ন্ত্রণ করছে এ দেশের পররাষ্ট্রনীতি?
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লন্ডনে ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, তিন বছরে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা নাকি ১৯ বার সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু তারা সফল হতে পারেননি। বাংলাদেশ আছে সেনা অভ্যুত্থানের ঝুঁকির মধ্যে। যদি তিনি এ কথা সত্যি বলে থাকেন তবে সেটা কতটা সমীচীন হয়েছে তা নিয়ে থাকছে প্রশ্ন। বিদেশে দেশের ভেতরকার এই দুর্বলতাকে প্রকাশ করা দীপু মনির রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচয় বহন করছে না। তিনি যেন চেয়েছেন ভারতের প্রিয়পাত্র হতে। যেটা এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অবমাননাকর। কিন্তু দীপু এসব কথা বলে যেন চেয়েছেন তৃপ্তি পেতে। ভারত ও আমাদের স্বার্থ একসূত্রে গাঁথা নয়। চীন ও ভারতের মধ্যে বিরাজ করছে বিরাট সীমান্ত বিরোধ। বিরাজ করছে এশিয়ায় পরাশক্তি হওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে চীনের কোনো সীমান্ত বিরোধ নেই। আর পরাশক্তি হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। কী করে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বার্থ অভিন্ন হতে পারছে সেটা আমাদের কাছে মোটেও তাই স্বচ্ছ হতে পারছে না। আর স্পষ্ট হতে পারছে না বর্তমান বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি। আওয়ামী লীগ দাবি করছে যে, সে অনুসরণ করে চলেছে শেখ মুজিবের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু শেখ মুজিব ঠিক কী চেয়েছিলেন সেটাও আমাদের কাছে এখনো হয়ে আছে যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিব ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। এ সময় তিনি কী ভেবেছিলেন তা আমরা জানি না। শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি। এরপর তিনি ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের বিশেষ বিমানে করে যান লন্ডনে। সেখানে তিনি তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথের সাথে আলোচনা করেন। তিনি কেন পাকিস্তান থেকে লন্ডনে যাওয়ার ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায় না।
আমি এ সময় ছিলাম কলকাতায়। কলকাতায় গুজব রটেছিল, শেখ মুজিব নাকি জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে একটি বিশেষ চুক্তি করেছিলেন। যাতে বাংলাদেশ ও বর্তমান পাকিস্তান হতে যাচ্ছে একটা কনফেডারেশন বা রাষ্ট্র সমবায়। এ কথা কত দূর সত্য তা আমরা বলতে পারি না। কিন্তু ভারতীয় বুদ্ধিজীবী মহলে এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল যথেষ্ট উদ্বেগ। শেখ মুজিব বাংলাদেশে ফিরে ১২ জানুয়ারি (১৯৭২) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করার পর তিনি যোগ দেন ইসলামি সম্মেলন সংস্থায়। এ উপলক্ষে তিনি যান পাকিস্তানে। তিনি ক্ষমতায় আসার পর কার্যত চাননি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। বাংলাদেশে যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল অথবা চাননি সাবেক পাকিস্তান ভেঙে যাক, তিনি চাননি তাদের বিচার করতে। কার্যত তিনি এক্ষেত্রে প্রদর্শন করেছিলেন সাধারণ ক্ষমার মনোভাব। ১৯৭৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোকে বাংলাদেশ সফর করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। ভুট্টো তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আসেন বাংলাদেশে। এ থেকে মনে করা যায় যে, শেখ মুজিব চেয়েছিলেন, পাকিস্তানের সাথে বিশেষ মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হতে। যদিও তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে জুলফিকার আলী ভুট্টো সম্পর্কে করেছিলেন বিরূপ মন্তব্য। বর্তমান আওয়ামী লীগ চাচ্ছে না পাকিস্তানের সাথে কোনো প্রকার সুসম্পর্ক গড়তে। বরং চাচ্ছে পাকিস্তানবিরোধী কথা বলে এ দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হতে। কিন্তু ১৯৭১ সালের পরিস্থিতি আর বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে যতটা বন্ধু ভেবেছে, এখন আর তা ভাবতে পারছে না। কিন্তু এই সহজ সত্যটাকে যেন আওয়ামী লীগের নেতারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। আর তাই হয়ে পড়ছেন গণবিচ্ছিন্ন।
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি পরম রবীন্দ্রভক্ত। গোটা আওয়ামী লীগ এখন রবীন্দ্রনাথের মধ্যে খুঁজে পেতে চাচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বুনিয়াদ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আর যা-ই হোন বাঙালি জাতীয়তাবাদী ছিলেন না। তিনি চাননি বাংলা ভাষাভিত্তিক কোনো পৃথক স্বাধীন দেশ গড়তে। তিনি আস্থাশীল ছিলেন অখণ্ড ভারতে। আর চেয়েছিলেন বাংলা বা অন্য কোনো ভাষা নয়, হিন্দি হতে হবে ভারতের একমাত্র রাষ্ট্র অথবা যোগাযোগ রার ভাষা। শেখ মুজিব ঠিক এ রকম রবীন্দ্রভক্তি প্রদর্শন করেননি। রবীন্দ্রনাথ তার মনমানসিকতায় প্রতিভাত হননি গুরুদেব হিসেবে। এ জন্যই তিনি অসুস্থ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথকে নয়, তিনি নজরুলকেই প্রতিষ্ঠিত করেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে। কিন্তু নজরুলকে অবহেলা করে বর্তমান আওয়ামী লীগ ভারতকে খুশি করার জন্য শুরু করেছে যেন রবীন্দ্রপূজা। যে রকম রবীন্দ্রপূজা এখন আর ভারতেও নেই। রবীন্দ্রনাথকে তারা চাচ্ছে বস্তুনিষ্ঠভাবে মূল্যায়ন করতে। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের একটা বিরাট অংশকে ভারতে বলা হচ্ছে আসলে অনুবাদ সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের একাধিক ছোটগল্পে রয়েছে মার্কিন গল্প লেখক এডগার এলেন পোর প্রভাব। কবিতায় রয়েছে একাধিক ইংরেজ কবির লেখার ছায়া। উপন্যাসে পড়েছে গলস্ওয়ার্থ (J Galsworthy)-এর মতো লেখকের প্রভাব। রবীন্দ্রনাথের স্বকীয়তা নিয়ে এখন সৃষ্টি হতে পেরেছে যথেষ্ট সমালোচনা। রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলির জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার এই ইংরেজি অনুবাদে থেকেছে বিলাতের কবি ইয়েটসের প্রভাব। ইয়েটস তার কবিতাগুলোর ইংরেজি অনুবাদকে করেছিলেন সম্পাদনা। দিয়েছিলেন তার বর্তমান রূপ। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি গীতাঞ্জলি বহন করে না কেবলই রবীন্দ্রপ্রতিভার পরিচয়। এসব কথা এখন বিশেষভাবে বলছেন ভারতীয় রবীন্দ্র সমালোচকরা। কিন্তু আমরা করছি রবীন্দ্রপূজা। দেখাচ্ছি রবীন্দ্রভক্তি। রবীন্দ্রনাথের গান আমাদের ভালো লাগে। কিন্তু এই গানেও আছে ইউরোপীয় গানের প্রভাব।
বাংলা গানে প্রথম ইউরোপীয় গানের প্রভাব বহন করে আনেন দ্বীজেন্দ্রলাল রায়। দ্বীজেন্দ্রলাল রায় রচিত ও সুরারোপিত গান ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’কে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভারত সরকারের চাপে সেটা করা সম্ভব হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার বাংলা’ গানটিকে চাপিয়ে দেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে। এই গানটি রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছিলেন ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সময়। এর লক্ষ্য ছিল বঙ্গভঙ্গ রদ করা। এর লক্ষ্য ছিল না কোনো পৃথক স্বাধীন বাংলাদেশ গড়া।
রবীন্দ্রনাথ ও ঠাকুর পরিবার একসময় ছিলেন খুবই ব্রিটিশভক্ত। রবীন্দ্রনাথ তার গীতাঞ্জলিতে ‘ভারততীর্থ’ কবিতায় বলেছেন, ইংরেজকে শুচিমন করে ভারত শাসন করতে, ছেড়ে যেতে নয়। একপর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ বলতেন তিনি বিশ্বমানবতায় বিশ্বাস করেন। তিনি সর্বপ্রকার জাতীয়তাবাদের বিরোধী। এ নিয়ে এ দেশে যারা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করছিলেন তাদের সাথে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি হয় ভাবগত বিরোধ। কবি নজরুল ব্রিটিশবিরোধী কবিতা লিখে জেল খেটেছেন। তার আগে ব্রিটিশ শাসনবিরোধী কবিতা লিখে জেল খেটেছেন ইসমাইল হোসেন শিরাজী। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কখনোই এ রকম কিছু লিখেননি। বরং তার বিখ্যাত ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাসে যা লিখেছেন, তা হতে পেরেছে ব্রিটিশ কর্তৃপরে কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ‘পথের দাবি’ ইংরেজ আমলে নিষিদ্ধ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তখন বলেন, শরৎচন্দ্র এ রকম উপন্যাস লিখে ঠিক কাজ করেননি। এ হলো রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার পরিচয়। কিন্তু এই রবীন্দ্রনাথকেই এখন আওয়ামী লীগ সরকার তুলে ধরতে চাচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম অংশ হিসেবে। আর এটা জড়িয়ে পড়ছে তাদের পররাষ্ট্রনীতিরও সাথে। কারণ এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ভাবছে ভারতের সাথে গড়ে উঠতে পারবে বিশেষ সুসম্পর্ক।
অনেক কিছুই ঘটছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ভারত নির্মাণ করছে এমন ক্ষেপণাস্ত্র, যা চীনের রাজধানী বেইজিংকে আঘাত করতে পারবে পরমাণু বোমা বহন করে। অন্য দিকে পাকিস্তান নির্মাণ করতে স ক্ষম হয়েছে এ রকম ক্ষেপণাস্ত্র, যা পরমাণু বোমা বহন করে ভারতের যেকোনো অঞ্চলকে আঘাত করতে সম। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অস্ত্রভাণ্ডারে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল না। কিন্তু পাকিস্তান এখন নিজেই পারছে পরমাণু বোমা বানাতে। বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানকে সামরিক দিক থেকে যতটা দুর্বল মনে করছে পাকিস্তান তা নয়। পাকিস্তানের সাথে চীনের সামরিক সহযোগিতা বাড়ছে। চীন পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ইতোমধ্যেই নির্মাণ করেছে নৌঘাঁটি। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তান সফরে যাওয়ার। মনে হচ্ছে এর ফলে পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়বে। আর এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত পাকিস্তান সামরিক শক্তির অনুপাত আগের তুলনায় অনেক ভিন্ন হয়ে পড়বে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার এটা উপলব্ধি করতে পারছে কি না আমরা তা অবগত নয়।
বর্তমান পাকিস্তান হচ্ছে ব্রিটিশ শাসনামলের সেসব অঞ্চল নিয়ে গঠিত যেখান থেকে ব্রিটিশ-ভারতের সেনাবাহিনীতে এসেছে অধিক সৈন্য। বর্তমান পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ হলেন অনেক রণনিপুণ (War-Like)। ১৯৭১ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে সাবেক পাকিস্তান বাহিনী হেরে যায়। এর কারণ ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ হয়ে উঠেছিল তাদের বৈরী। জনসমর্থনের অভাবেই তাদের হেরে যেতে হয়। কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর বিরাজ করছে না। তথাপি আওয়ামী লীগ একাত্তরের কথা বিবেচনা করে গ্রহণ করতে চাচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি। যেটাকে বলা যেতে পারে মূলগতভাবেই ভুল।
আওয়ামী লীগ বলছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা। অন্য দিকে বিএনপি বলছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কথা। এই দুই দলের মধ্যে এখন বাংলাদেশে সৃষ্টি হতে পারছে চরম বিরোধ। এই দুই দলের বিরোধ কেবলই ক্ষমতার ব্যাপার নয়, কিছুটা মতাদর্শেরও ব্যাপার। রাষ্ট্রপতি জিয়া চাননি পাকিস্তানের সাথে বিবাদ-বিসংবাদ। তিনি চেয়েছেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করতে। আর এক্ষেত্রে চেয়েছেন বর্তমান পাকিস্তানের বেশ কিছুটা সহযোগিতা। আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর বিএনপির বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ঠিক এক প্রকৃতির জাতীয়তাবাদ নয়। আর এই দুই দলের পররাষ্ট্রনীতিও তাই হতে পারে না একই রকম। বিএনপি ভারতের সাথে বৈরিতা চায় না। কিন্তু মৈত্রী গড়তে গিয়ে চায় না আপন জাতিসত্তাকে ভারতের মধ্যে বিলুপ্ত করতে।