ভূমিকম্পকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা পারি, ভূমিকম্পেরে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এবং মানুষের মৃত্যু অথবা আহত হওয়ার পরিমাণ কমাতে। একসময় ভূমিকম্প আমাদের দেশে তেমন একটা বিরাট সমস্যা ছিল না। মানুষ বাস করেছে গ্রামে, বাঁশের তৈরী কুঁড়েঘরে। বাঁশের তৈরী কুঁড়েঘর ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে মানুষের মাথার উপরে ভেঙে পড়ে না। ভূমিকম্প সমস্যা হয়ে উঠেছে সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে, যখন মানুষ গড়ে তুলেছে নগর জীবন। বানাতে আরম্ভ করেছে পাথর ও ইট দিয়ে ইমারত। উঁচু ইমারত ভূমিকম্পের আন্দোলনে অনেক সহজে ভেঙে পড়তে পারে মানুষের মাথার ওপর। ভূমিকম্পে শহরে যে পরিমাণ মানুষ আহত ও নিহত হন, কোনো দেশের গ্রামে তা হন না।
ভূমিকম্পের সমস্যা প্রধানত নগর জীবনের সমস্যা। আরেক কথায় সভ্যতার সমস্যা। ভূমিকম্পকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কিন্তু এখন গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়িঘর। যারা ভূমিকম্পে আন্দোলিত হয় কিন্তু ভেঙে পড়ে না। এদের নির্মাণ করা হচ্ছে বিশেষভাবে ইস্পাতের কাঠামো নির্মাণ করে। আর এদের দেয়ালগুলো করা হচ্ছে যথেষ্ট পাতলা করে। ভূমিকম্প নিরোধী বাড়িঘর নির্মাণ করে জাপান ও ইতালি ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে মানুষের প্রাণ নাশ কমাতে সক্ষম হচ্ছে। কেননা, ভূমিকম্পে মানুষ মারা যায় তাদের ওপর বাড়িঘর ভেঙে পড়ার ফলে। অনেক সময় ভূমিকম্পের ফলে মাটি ফেটে যায়। তার মধ্যে পড়ে মানুষ মারা যেতে পারে। কিন্তু তেমন ভূমিকম্প সাধারণত হয় না।
ক’দিন আগে নেপালে ভূমিকম্প হলো। এতে মারা গেল অনেক লোক। আহত হলো আরো অধিক সংখ্যায়। কেননা, নেপালে বাড়িঘর নির্মিত হয়েছে খুব দুর্বল নির্মাণ উপকরণ দিয়ে। দুর্বল নির্মাণ উপকরণ দিয়ে নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন। বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে দুর্বল মাটির ওপর। নেপাল একটি ভূমিকম্পপ্রবল অঞ্চল। পৃথিবীতে আরো অনেক ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল আছে। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে আইন প্রণীত হয়েছে দুর্বল ভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের বিপক্ষে। আইন করা হয়েছে কোনো নিচু ভূমি যথাযথভাবে ভরাট না করে তাতে ইমারত গড়া চলবে না। বাংলাদেশ নেপালের মতো অতটা ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ নয়। কিন্তু মোটামুটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের অন্তর্গত। এখানে নিচু জায়গা ও পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ইমারত, যা বাড়িয়ে তুলছে ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগের মাত্রা। ঢাকা শহরে রিখটার স্কেলের ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে বহুলোকের মৃত্যু হতে পারে। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত অনেক দেশে এখন ভূমিকম্পে সৃষ্ট দুর্যোগের সময় ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য করা হয়েছে বিশেষ ধরনের বিভাগ। কিন্তু আমাদের দেশে এরকম কোনো বিভাগ নেই। নেপালেও হতে পারছে না যথাযথভাবে ত্রাণ সরবরাহ। আমরা ভূমিকম্প নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না বিন্তু ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি, রাষ্ট্রিক আইন করে এবং তা যথাযথভাবে পালন করে। ভূমিকম্প দু’এক জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। যেসব জায়গায় ভূ-ত্বকে ফাটল থাকে, সেখানে ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। কারণ, ফাটলের কাছ থেকে ভূমি ঢালু দিকে সরে যেতে চায়। এই সরে যাওয়ার সময় নিচের ভূমির সাথে ঘর্ষণ লেগে উপরের ভূমি কেঁপে ওঠে অনেক অধিকভাবে। যে কারণে ওই সরে যাওয়া ভূমির উপরে অবস্থিত বাড়িঘর ভেঙে পড়ে। এখন মানুষ এরকম ফাটল ধরা মাটিতে ফাটলের মধ্যে পাম্প করে পানি ঢোকাচ্ছে। যাতে করে ফাটল ধরা জমি ধীরে ধীরে সরে যায় এমন অবস্থায়, যেখানে ভূমিকম্প হওয়ার ফলে ওই ভূমি দ্রুত সরে যাবে না, হবে না ভয়ঙ্করভাবে কম্পিত। এভাবে ভূমিকম্প নিয়ন্ত্রণ এখনো ব্যাপক হারে হচ্ছে না। তবে নিকট ভবিষ্যতে হতে পারে।
কাঠমান্ডুতে একটা ফাটল ছিল। এই ফাটল থেকে মাটি ভূমিকম্পের সময় তিন মিটার দক্ষিণে সরে গিয়েছে। এই সরে যাওয়ার কারণে ভেঙেছে বাড়িঘরের সংখ্যা। যদি আগে থেকে ফাটলে পানি ঢুকিয়ে ভূমি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো, তবে হয়তো এভাবে ভূমি সরে তার ওপর অবস্থিত বাড়িঘরের ভাঙন কিছুটা নিবারিত হতে পারত। কিন্তু নেপাল দেশটা আমাদেরই মতো। সেখানে রাজনীতি করার মতো লোক অনেক আছেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিসম্পন্ন লোক নেই। মানুষ সেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে ভাবতে যতটা ব্যস্ত, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে কীভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে অতটা ব্যস্ত নয়। অথচ নেপালে বহুবার ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে; এবং আরো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশে অকেন বড় ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় ভূত্বকের গভীরে। ভূমিকম্প যেখানে সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু। কেন্দ্রবিন্দু বলা হলেও আসলে এটা হলো যথেষ্ট বিস্তৃত স্থান। এই স্থানের ঠিক উপরের মাটিকে বলা হয় ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পের ঢেউ চার দিকে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে। যার কম্পনের ফলে ভেঙে পড়ে বাড়িঘর। পূর্ববঙ্গ ও মধ্যবঙ্গে ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। যার উপকেন্দ্র ছিল ঢাকার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ১৯১৮ সালের ৮ জুলাই তখনকার আসাম প্রদেশে অনেক জায়গাজুড়ে খুবই ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। এই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল সিলেটের শ্রীমঙ্গল। এই ভূমিকম্পের ফলে শ্রীমঙ্গলের বহু চায়ের বাগান বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশে হিমালয়ের মতো কোনো পর্বতশ্রেণী নেই। কিন্তু যে অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশ গঠিত, সেখানে অনেক ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পেরেছে। আর সম্ভাবনা রয়েছে ভবিষ্যতেও সৃষ্টি হওয়ার। ভূমিকম্প যে কেবল পাহাড়ি অঞ্চলেই হয়, তা নয়। বঙ্গোপসাগরেও পানির নিচে অবস্থিত ভূমিতে যথেষ্ট ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো ভূমিকম্প মানমন্দির নেই। এখানে হচ্ছে না ভূমিকম্প নিয়ে কোনো গবেষণা (যতদূর জানি)। অথচ এটা হওয়া অবশ্যই দরকার ।
ভূমিকম্প কেন হয়, তা নিয়ে অনেক মত আছে। একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ করার মতো, তা হলো পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ভূ-ত্বকের (ভূ-ত্বক বলতে বোঝায় পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিম্ন অংশকে।) মধ্যে যত নিচের দিকে যাওয়া যায়, তত তাপ বাড়তে থাকে। ভূ-ত্বকের মধ্যে প্রতি কিলোমিটারে তাপ বেড়ে যায় প্রায় ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। ভূ-ত্বকের নিম্নভাগে এই হিসাবে যে তাপমাত্রা বিরাজমান, তাতে সব পাথর গলে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না। এর কারণ, উপরিভাগের প্রচণ্ড চাপ। যে চাপে পাথর গলে যেতে পারে না। কিন্তু উপরের চাপ কোনো কারণে যদি কমে যায় তবে নিচের পাথর গলে যে সম্প্রসারিত হয়, এই সম্প্রসারণের ফলে সৃষ্টি হয় ধাক্কার। এই ধাক্কার ফলে উপরের মাটি কেঁপে ওঠে। যাকে আমরা বলি ভূমিকম্প। পৃথিবীর অনেক জায়গায় ছিদ্র দিয়ে গলিত প্রস্তর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। এসব জায়গায় সৃষ্টি হয় আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয়গিরি থেকে যে গলিত পাথর বেরিয়ে আসে, তাকে বলা হয় লাভা। লাভা নির্গমনের সময় প্রচণ্ড ধাক্কার সৃষ্টি হয়। কেঁপে ওঠে ভূমি। আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণের সময় তাই হতে দেখা যায় ভূমিকম্প।
মেক্সিকোতে ১৯৪৩ সালে একজন কৃষক চাষ করছিলেন তার ক্ষেতে। হঠাৎ তিনি বুঝতে পারেন, তার পায়ের নিচের মাটি ক্রমশ গরম হয়ে উঠছে। তিনি তার ক্ষেত ছেড়ে চলে যান বেশ কিছু দূরে এবং দেখতে পান যে, তার ক্ষেতের মাটি ক্রমেই উঁচু হয়ে উঠছে। একপর্যায়ে তার মধ্য থেকে নির্গত হতে থাকে লাভা। আর আরম্ভ হয় ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প। এ যাবৎ এটাই হলো মানুষের দেখা আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হওয়ার বিবরণ। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের জন্য ভূমিকম্প হয়। কিন্তু লাভা সব সময় বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। লাভার ধাক্কায় মাটির মধ্যে সৃষ্টি হয় ভূমিকম্প। যে কম্পন ভূপৃষ্ঠকে কাঁপিয়ে তোলে। আমরা চলতি কথায় যাকে বলি ভূমিকম্প।
ভূ-ত্বকের মধ্যে পাথর গলে লাভায় পরিণত হয়, যখন তার ওপর কোনো কারণে চাপের মাত্রা কমে যায়। পাহাড়ি অঞ্চলে ভূ-ত্বক অনেক সহজে ক্ষয় হতে পারে। তাই সেখানে চাপের মাত্রা কমে গিয়ে অনেক সহজে ঘটতে পারে ভূমিকম্পের উদ্ভব। কিন্তু কেবল পাহাড়ি অঞ্চলেই যে ভূমিকম্প হয়, তা নয়। সমভূমিতেও ভূমিকম্পের উদ্ভব হতে পারে। একটি জিনিস লক্ষ করা গেছে যে, ভূমিকম্প হওয়ার আগে অনেক জায়গায় বায়ুর চাপ কমে যায়। মনে করা হয় এই বায়ুর চাপ কমে যাওয়ার সঙ্গে ভূমিকম্প হওয়ার কিছু যোগাযোগ আছে। সাধারণত অমাবস্যা পূর্ণিমাতে বড় রকমের ভূমিকম্প হতে দেখা যায়। মনে করা হয়, চাঁদ ও সূর্যের টানের সাথে বড় রকমের ভূমিকম্প হওয়ার যোগাযোগ আছে। চাঁদ ও সূর্যের টানের ফলে ভূ-ত্বকের ভেতরে চাপ কমে যায়। ফলে শিলা গলে পরিণত হতে চায় লাভায়। দেখা গেছে যে, ১১ বছর পরপর সাধারণত বড় রকমের ভূমিকম্প হয়। এর একটি কারণ হতে পারে ১১ বছর পরপর সূর্যে সৌর কলঙ্ক বাড়ে। যার ফলে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। অনেকে মনে করেন চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে ভূমিকম্পের যোগাযোগ আছে। সাধারণত দেখা যায় কোনো জায়গায় বড় রকমের ভূমিকম্প ঘটার আগে সে জায়গায় চৌম্বক ঝড় হতে। চুম্বক ঝড় বলতে বোঝায়, এখানে কম্পাসের কাঁটা হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে। উত্তর দিক হতে চায় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ দিক হতে চায় উত্তর। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে চুম্বক ক্ষেত্রের এই ঝড় সহায়ক হতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা। এ নিয়ে চলেছে গবেষণা। বড় রকমের ভূমিকম্প হওয়ার আগে অনেক জায়গার গভীর নলকূপের পানিতে বাড়তে দেখা যায় র্যাডন গ্যাসের পরিমাণ। হতে দেখা যায় ভূমিতে বিশেষ ধরনের বক্রতার সৃষ্টি । ভূমির একদিক উঁচু হয়, আরেক দিক হয়ে ওঠে নিচু। এসব গবেষণার ফলে অদূরভবিষ্যতে হয়তো সম্ভব হবে বড় রকমের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়া। কিন্তু এখনো বিষয়টি রয়েছে গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে।
গত ২৫ মার্চ নেপালে ভূমিকম্প হলো। এই ভূমিকম্পের ধাক্কা বাংলাদেশেও এসে পৌঁছেছিল। রাজশাহীতেও কেঁপে উঠেছিল যথেষ্ট প্রবলভাবে মাটি। বেশ কিছু বাড়িতে এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে ফাটল। একটি সাততলা বাড়ি কিছুটা দেবে গিয়েছে মাটির মধ্যে। তবে কোনো বাড়ি ভেঙে পড়েনি। মৃত্যু হয়নি ভূমিকম্পের ফলে কারো। তবে মানুষ সাধারণভাবে হয়েছিলেন খুবই আতঙ্কিত। তারা নেমে এসেছিলেন পথে। কিন্তু তারা পথে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বৈদ্যুতিক তারের নিচে। যেটা মোটেও উচিত ছিল না। কেননা, ভূমিকম্পের সময় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে মানুষের ওপর পড়তে পারে। আর ইলেকট্রিক শকে মারা যেতে পারে মানুষ। অন্য দেশে এর নজির আছে। ভূমিকম্পপ্রবণ দেশে তাই সরকারিভাবে বলা হয় পথে এসে বৈদ্যুতিক তারের নিচে না দাঁড়াতে। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার থেকে আগে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বলা হলে মানুষ এভাবে রাস্তায় এসে জড়ো হতো না। আমি নিজে অনেককে বলেছি বৈদ্যুতিক তারের নিচে না দাঁড়াতে। আমি ছিলাম রাস্তার মাঝখানে। কিন্তু আমার কথা কারো মনে ধরেনি। তারা ভাবছিল একজন বৃদ্ধব্যক্তি অনর্থক বকবক করছেন মাত্র। আর একটি বিষয় দেখে বিস্মিত হলাম। নারী ও পুরুষ ভূমিকম্পের সময় হয়েছিলেন খুবই আতঙ্কিত। রাজশাহীতে কয়েকজন মহিলা আতঙ্কে সংজ্ঞা হারান। তাদের নিয়ে যেতে হয়েছে হাসপাতালে। কিন্তু কোনো পুরুষ এভাবে ভূমিকম্পের ভয়ে জ্ঞান হারাননি। একসময় মেয়েরা ছিলেন গৃহবন্দী। তারা জানতেন না অনেক কিছুই। ভয় পেয়ে জ্ঞান হারানো তাদের পক্ষে ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এই নারীবাদী আন্দোলনের যুগেও মেয়েরা ভূমিকম্পের আতঙ্কে সংজ্ঞা হারাচ্ছেন আমাদের দেশে। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে বেশ কিছুটা বিসদৃশ্য। মনে হয়েছে মেয়েরা এখনো এ দেশে পারেন না পুরুষের সমক্ষতার দাবি করতে।
পরিশেষ একটি কথা বলা দরকার, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত হলেও এর অনেক অঞ্চলের মাটি হলো এঁটেল। এঁটেল মাটির মধ্য দিয়ে ভূমিকম্পের ঢেউ প্রবলভাবে প্রবাহিত হতে পারে না। তাই বাংলাদেশের সব অংশই যে ভূমিকম্পের কারণে একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারবে, এমন নয়। মাটির চরিত্রের ওপর ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকাংশে নির্ভরশীল। আমাদের পত্রপত্রিকায় ভূমিকম্প নিয়ে অনেক কিছু লেখা হচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয়ে কিছু আলোচনা হচ্ছে না। কেবলই ছড়ানো হচ্ছে ভূমিকম্পভীতি। এ ধরনের সাংবাদিকতা সমর্থনীয় নয়।
দৈনিক নয়াদিগন্ত। ০৮ মে ২০১৫।